
তামিম ইকবাল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যান। তামিমের বিজ্ঞাপনে একটি স্পিচ ছিল, ‘আমি জিতলে জিতে যায় মা।’ বাংলাদেশের মানুষ জানে, তামিম ভালো খেললে ভালো খেলে বাংলাদেশ দল। এই বাঁহাতি ওপেনারের হাত ধরে আমাদের অসংখ্য জয় এসেছে।



তা ছাড়া দেশের পক্ষে সব চেয়ে বেশি রান, সব চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি এ সব পরিসংখ্যান তো ক্রিকেটার তামিমের ছবিটা তুলে ধরে ভক্তদের কাছে। কিন্তু ব্যক্তি তামিম কেমন? কেমন তাঁর চিন্তা-ভাবনা, জীবন দর্শন? এ সব ফুটে উঠেছে দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদ মাধ্যমে।
সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে তামিম বলেন ক্রিকেট খেলার সুবাধে বিশ্বের অনেক দেশে গিয়েছি কিন্তু মক্কা-মদিনার মতো শান্তি কোথাও পায়নি। এ দিকে সেই সাক্ষাৎকারে তামিমকে প্রশ্ন করা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার পর নিশ্চয়ই ২০১৫ সালটাকেই সবচেয়ে বাজে সময় বলবেন ?



জবাবে তামিম বলেন, ‘হ্যাঁ, ২০১৪-১৫। তবে সেটা ছিল অন্য রকম। আমার প্রতি মানুষের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আমি ভালো খেললাম কি খা’রা’প খেললাম এ সব নিয়ে বেশি আলোচনা হতো। সবচেয়ে খা’রা’প ছিল একটু খা’রা’প খেললে যে ভাবে আমাকে আ’ক্র’ম’ণ করা হতো। এটা যদি শুধু আমার ওপর থাকত, আমি হয়তো সামলে নিতে পারতাম।
কিন্তু বিষয়টা আমার পরিবার পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আমার স্ত্রীকে রাতে ফোন করে গা’লা’গা’ল দিয়েছে মানুষ। এই জিনিসটা নিতে পারিনি আমি। আমার কথা হলো, তাদের কী দো’ষ? তারা তো আর খেলে না, ব্যাটিং করে না। আমি খেলি, আমি ব্যাটিং করি…খা’রা’প খেললে আমি খা’রা’প খেলি।



আমার পরিবারকেও যখন মানুষ আ’ক্র’ম’ণ করল, আমার মাথা ঠিক থাকল না। ওই সময়ে আমি সব চেয়ে ভালো যে কাজটা করেছি, তা হলো ওমরাহ করতে চলে যাওয়া।’ এরপর থেকে তো প্রায়ই ওমরাহ করতে যান। প্রতিবারই কি এর সঙ্গে বাজে সময় কাটিয়ে ওঠার সম্পর্ক থাকে? তামিম বলেন, ‘দেখুন, তখনো কিন্তু আমি এক মুহূর্তের জন্য ভাবিনি এর সঙ্গে ভালো খেলতে চাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে।
আমি গিয়েছিলাম মা’ন’সি’ক প্রশান্তির জন্য। সবাই বলে সব চেয়ে শান্তির জায়গা ম’ক্কা-মদিনা। আমি সেই শান্তির খোঁজে গিয়েছিলাম। খেলার সুবাদে আমি অনেক দেশে ঘুরেছি, কিন্তু ও রকম শান্তি কোথাও পাইনি। সব ধর্মের প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল।’



‘তবে মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা ধর্ম পুরো পুরি মানেন না, তাঁদের একটা কথা বলতে চাই। ছুটি কাটাতে তো আপনারা অনেক জায়গায় যান। ওমরাহ বা হজ করার দরকার নেই, ছুটি কা’টা’নোর কথা ভেবেই একবার মদিনায় যান। তা হলে বুঝবেন জায়গাটা আসলে কী। ওখানে যাঁরা গেছেন তাঁরাই শুধু জানেন ম’ক্কা-মদিনায় কী শান্তি আছে।’
‘ওখানে যাওয়ার পর ক্রিকেট, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সার কথা একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি। আমি শুধু আল্লাহর কাছে মাফ চেয়েছি। যে মা’ন’সি’ক শান্তিটা ওখানে পেয়েছি, আমার জন্য ওটা ছিল অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ক্রিকেট, ব্যক্তিগত জীবন সব কিছুর জন্যই। আমি খুব সতেজ হয়ে ফিরে আসি সেখান থেকে। আল্লাহও আমার প্রতি অত্যন্ত সহায় ছিলেন। আমি পাকিস্তান সিরিজে খেলি। বাকিটা ইতিহাস।’



এ সময় অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে তামিম বলেন, ‘ভালো–খা’রা’প মিলিয়েই মানুষ। আমার মধ্যেও খা’রা’প অনেক কিছু আছে। প্রথমত ধর্মীয় দিক থেকে আমি যদি আরেকটু সচেতন হই, আমি যদি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারি।
আমি সব সময় তা পারি না। আমার খা’রা’পের মধ্যে এটা অন্যতম। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তাঁর প্রতি আমার আরও কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’
‘আর একটা জিনিস, আমি মানুষের সঙ্গে অনেক মজা করতে পছন্দ করি। তবে সেটা কখনোই কাউকে ক’ষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। আমি মজা করি তাদের সঙ্গেই, যাদের সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠ। তবে আমার মজার কারণে কিছু মানুষ কখনো কখনো ক’ষ্টও পেয়ে যেতে পারেন। তাঁদের এটাই বলব, আমি এটা ইচ্ছা করে করি না।