
জীবনের চূড়ান্ত নিয়তি – আজ থেকে প্রায় ২০ বছর পূর্বে একজন চীনা নারী তার ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন।
কিন্তু দেশটিতে তার এই ভ্রমণ যে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে সে সম্পর্কে তিনি একেবারেই অবগত ছিলেন না।



আরব আমিরাত ভ্রমণে ২২ বছর বয়সী রেম হং নামের এই চীনা নারী দেশটিতে সফরের মাত্র এক সপ্তাহ পরে ১৯৯৭ সালে অক্টোবর মাসে দুবাইতে স্থানান্তরিত হন যেখানে তিনি তার ভবিষ্যৎ স্বামীর সাথে দেখা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। আর তার এই দুবাই ভ্রমণকে তিনি তার জীবনের চূড়ান্ত নিয়তি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আর বর্তমানে ২০ বছর পরে রেম হং শুধুমাত্র চার আমিরাতি সন্তানের জননী হননি বরং তিনি সেখানে একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন যার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাচ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা।



রে হং যিনি তার প্রকৌশলী স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার তিন বছর পূর্ব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, বার্তা সংস্থা খালিজ টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সফরে আসার পরে তার জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন হয়।
সেসময় রে হংয়ের স্বামী তার চাচার ব্যবসায়ে কর্মরত ছিলেন এবং তার সাথে রে হংয়ের পিতার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, যার আরব আমিরাতে নিজস্ব ব্যবসা ছিল।
রে হং বলেন যদিও তিনি এবং তার স্বামী ধরে নিয়েছিলেন যে, তারা দুজন দুটি ভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন কিন্তু তাদের একসাথে হওয়ার মধ্যে অনন্য কিছু ছিল। রে হংয়ের ভাষায়- ‘আমি চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্ম নিয়েছিলাম।



আমার পরিবার সম্পর্কে কথা বলতে গেলে বলতে হয়, আমরা আরব আমিরাতের সাথে আচার-আচরণ গত দিক থেকে সংযুক্ত ছিলাম। আমাদের পরিবারের সদস্যরা একে অন্যকে সম্মান করা, বড়দের সেবা করা এবং শিশুদের যত্ন করাতে অভ্যস্ত ছিল আর এভাবেই আমরা বেড়ে উঠেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখানে অতোটা বাধার সম্মুখীন হই নি, এখানকার সাথে ঐতিহ্যগত যে বিষয়টি আমাদের সাথে মিলে না তা হচ্ছে, এখানে আমি শুরু থেকেই ঐতিহ্যবাহী আবায়া পরিধান করে আসছি।
আমি প্রথমে এটি পরিধান করতে চাইনি কিন্তু বর্তমানে আমি তা নিজের ইচ্ছাতে আনন্দের সাথে পরিধান করি। আমি একে স্বাচ্ছন্দময় এবং খুবই মার্জিত বলে মনে করি।’



তিনি তার আমিরাতি স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সংবাদ তার পরিবারকে জানানো সম্পর্কে স্মৃতি চারণ করেন। রে হং যখন প্রথমে তাদের এ সম্পর্কে জানান, তখন তার পিতা-মাতা তাদের এক মাত্র কন্যাকে তাদের নিকট থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে এই ভেবে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল। কিন্তু শীঘ্রই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
রে হং এবং তার স্বামীর বর্তমানে চারজন সন্তান রয়েছে এবং তারা সবাই আরবি, ইংরেজি আর ম্যান্ডারিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠেছেন।
তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, তার সন্তানেরা চীন এবং আরব আমিরাত এ দুদেশের সবচেয়ে উত্তম সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে বেড়ে উঠেছে।



তিনি এবং তার স্বামী একই সাথে চীনা ঐতিহ্য এবং আমিরাতের সংস্কৃতির মেল বন্ধন ঘটিয়ে তাদের সন্তানদের কে বড় করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এই পরিবারটি বছরে অন্তত দুবার চীন সফর করে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে এ দুই দেশের সংস্কৃতিতে খুঁজে পাই। আমি চীনে শিক্ষা নিয়েছি, চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার থেকে আমি দুবাইতে এসেছি এবং এখানে আমি চীনা ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের সাথে ইসলামের মূল্যবোধের যথেষ্ট মিল খুঁজে পেয়েছি।’
রে হং আরো বলেন, ‘আর এখানে দীর্ঘ সময় কাটানোর পরে, আমি নিজেকে আমিরাতের সংস্কৃতির সাথে একাত্ম অনুভব করি এবং আমি শুধুমাত্র এখানকার স্থানীয় তে রুপান্তরিত হইনি বরং আমি অনেক বেশি মানবিক হয়ে উঠেছি।’