
চলছে মুসলিম উম্মার জন্য ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস মাহে রমজান মাস। খেজুর মুসলমানদের কাছে অতি প্রিয় ও পবিত্র একটি ফল। রমজান মাস আসলে এর ব্যপক চাহিদা দেখা যায়।
মুসলমানদের শেষ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) খেজুর খুবই পছন্দ করতেন। সৌদি আরবের সর্বত্রই খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়।



অনুকুল আবহাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলো দেশে প্রচুর খেজুর উৎপাদন হয়। তবে বিশ্বের সব চেয়ে বড় খেজুর বাগানটির অবস্থান কিন্তু সৌদি আরবে। সবুজ গাছে ঘেরা সুবিশাল সে বাগান। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় বালুর ওপর কেউ বোধহয় সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। এই বাগানটিতে সারি সারি প্রায় দুই লাখ খেজুর গাছ রয়েছে।
সৌদি গণমাধ্যম আরব নিউজ ডট কম জানিয়েছে এই সুবিশাল বাগানটির অবস্থান মধ্য সৌদি আরবের আল-কাসীম প্রদেশের রাজধানী বুরাইদা শহরের কাছে। এর আয়তন প্রায় ৫ হাজার ৪৬৬ হেক্টর। এই বাগানটি প্রায় ৪৫ ধরনের খেজুর উৎপাদিত হয়ে থাকে।



বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই খেজুর বাগানের মালিকের নাম শেখ সালেহ বিন আবদুল আযীয রাজেহী। তার নামানুসারেই বাগানের নাম রাখা হয়েছে ‘রাজেহী বাগান’।
যদিও শুরুতে এই বাগানটি কেবল খেজুরের বাগান ছিল না। ১৯৯০ সালের দিকে এখানে খেজুরের পাশাপাশি গম ও তরমুজও চাষ করা হতো। ১৯৯৩ সালে এসে বাগান মালিক সালেহ বিন আবদুল আযীয রাজেহীর নির্দেশে এখান থেকে গম ও তরমুজ সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর থেকে সেখানে বিভিন্ন প্রকারের খেজুর গাছের আবাদ শুরু হয়।



রমজানে ওমরাহ পালনের উদ্দেশে যারা কাবা ও মদিনায় যান তারা প্রায় সবাই এই বাগানের খেজুর উপভোগ করেছেন। মূলত, রমজানে মক্কা-মদীনায় সর্বাধিক খেজুর সরবরাহ হয় এ বাগান থেকে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই খেজুর বাগানের কোনো খেজুরই বিক্রয়ের জন্য নয়। এই বাগানের পুরো উৎপাদনই আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে দেয়া হয়েছে। আর এ কারণেই এ বাগানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ওয়াকফ সম্পত্তি’ হিসাবেও এই বাগানকে বিবেচনা করা হয়। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে এ বাগানটি যুক্ত হয়েছে।



পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খেজুর উৎপাদনে সৌদি আরব বিশ্বে প্রথম। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে আড়াই কোটির বেশি খেজুর গাছ সরকারি ও বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন রয়েছে। এসব গাছে প্রায় ৩৬০ প্রকারের খেজুর উৎপাদিত হয়ে থাকে। তার মধ্যে দেশটির মদীনা, মাসকানি, মাবরুম, বারহি, সাকি, মুনিফি, শাশি, সুকারি ও আযওয়া নামের খেজুর বেশ প্রসিদ্ধ।
আজান পর্যন্ত সেহরি খেলে কি রোজা হবে?
আজান পর্যন্ত সেহরি খাওয়ার বিধান : পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব- আহসানুল ফতোয়া থেকে এ প্রসঙ্গে পুরো প্রশ্ন ও উত্তরটি তুলে ধরা হলো।



প্রশ্ন : আজানের সঙ্গে সঙ্গে সেহরি খাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দু-এক লোকমা, যা মুখের ভেতর ছিলো তা বের করে পানি পান করা হয়েছে। উক্ত সুরতে রোজা রাখা কি বৈধ হবে? নাকি এ রোজার কাযা করতে হবে? কোনো কোনো লোক মাইকে সাইলেন বাজানো, সেহরি বন্ধ করার ঘোষণা চলা অবস্থায়ও চা পান করে, তারপর কুলি করে নেয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এদের রোজার বিধান কি?
উত্তর : যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সুবহে সাদেক হওয়ার পর মসজিদে আজান দেয়া হচ্ছে তাহলে যারা আজান পর্যন্ত খেয়েছে তাদের রোজা হবে না। (আজান সাধারণত সুবহে সাদিক হওয়ার পরই দেয়া হয়। কারণ সুবহে সাদিকের আগে আজানের ওয়াক্ত আসে না।



তবে কোথাও ভুলে হলে ভিন্ন কথা। তাই আজান পর্যন্ত যারা খায় সাধারণত তাদের রোজা হয় না)। সুবহে সাদিক হওয়া এবং সেহরির ওয়াক্ত বাকি থাকার ব্যাপারে সংশয়যুক্ত সময়ে পানাহার করা মাকরূহ (আমাদের দেশের ক্যালেন্ডারগুলোতে আজান ও সেহরির মাঝে কয়েক মিনিট বিরতি দেয়া হয়। সংশয়যুক্ত সময় বলতে ওই সময়টাকে ধরা যায়)। তবে এ সময়ে খাওয়া দ্বারা রোজা সহিহ হয়ে যাবে। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৩২. আল ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদিদ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৩)।
সুবহে সাদিক হয়নি ভেবে সেহরি খাওয়ার পর সুবহে সাদিক হয়েছিলো প্রমাণিত হলে করণীয় : রাত আছে মনে করে যদি কেউ সেহরি খায়। অতঃপর জানা যায় যে, তখন সেহরির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে সে রোজার শুধু কাযা আদায় করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৪৩৬)।



সেহরির সময় ও মুস্তাহাব সময় : সেহরি বলা হয়, রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে যে খাবার খাওয়া হয়। ফকিহদের মতে, সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়কে ছয় ভাগ করে, শেষ ভাগে খাওয়াকে সেহরি বলে। তাই কোনো লোক যদি এশার পর, রোজার নিয়তে খেয়ে নেয় তাহলে ওই খাবারকে সেহরি বলা যাবে না। এবং এতে সেহরির সওয়াবও সে পাবে না।
তবে কেউ যদি সেহরির সময় হওয়ার আগেই খেয়ে নেয়। এরপর শেষ সময় পর্যন্ত চা পান ইত্যাদি করে তাহলেও সেহরির সওয়াব পেয়ে যাবে (আল ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদিদ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৩. বেহেশতি জেওর, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩২১)।



সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করবে না যে, সুবহে সাদিক হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা হয় এবং রোজার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। (মারাকিহুল ফালাহ-৩৭৩)।
মুসলমান ও অন্যান্য জাতির রোজার মাঝে পার্থক্য হচ্ছে সেহরি খাওয়া :
عن عمرو بن العاص ان رسول الله صلي الله عليه وسلم فصل ما بين صيامنا وصيام اهل الكتاب اكلة السحر
হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের ও ইহুদি-নাসারাদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো, সেহরি খাওয়া। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর-(১০৯৬)।