আল্লাহ কাউকে না খাইয়ে রাখেন না, রিজিকের মালিক একমাত্র তিনি

1652

মহান আল্লাহ পৃথিবীর কাউকে না খাইয়ে রাখেন না। সবল-দুর্বল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ, বুদ্ধিমান-বোকা সবাইকে রিজিক দান করেন। রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ।

আল্লাহ যদি কারো রিজিক বন্ধ করে দেন, তবে তা চালু করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ বলেন- এমন কে আছে যে তোমাদের রিজিক দান করবে, যদি তিনি রিজিক বন্ধ করে দেন? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে। (সুরা মুলক, আয়াত-২১)।

পবিত্র কোরআনের সূরা সাবার ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘বল, আমার প্রতিপালক তো তার বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা রিজিক বর্ধিত করেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন।

তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ সূরা সাবার উপরোক্ত আয়াতে যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে সেটি হলো- আল্লাহ ইচ্ছা করলেই যে কোনো ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দিতে পারেন, তেমনি তিনি তা কমিয়ে দিতেও পারেন।

আল্লাহ যেহেতু মানুষকে সম্পদ দেন, সেহেতু মানুষ যদি আল্লাহর নির্দেশিত পথে সে সম্পদ ব্যয় করে তবে তিনি বান্দাকে তার বিনিময় দান করার ব্যাপারেও প্রতিশ্রু’তিবদ্ধ। পবিত্র কোরআনের সূরা আশ-শুরার ২৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে,

‘আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে জীবনোপকরণে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপ’র্যয় সৃষ্টি করত, কিন্তু তিনি তার ইচ্ছামতো পরিমাণেই নাজিল করিয়া থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্যক জানেন ও দেখেন।’

মানুষের রোগ, শোক, হতাশায় মহান আল্লাহ যেভাবে সাহায্য করেন

মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান। যে কোনো কিছু করার একচ্ছত্র ক্ষমতাও তার। কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে এসব ক্ষমতা বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। মানুষ যেসব স্থানে নিজেকে অসহায় বা ব্যর্থ ভাবেন সেসব স্থানেও মহান আল্লাহ মানুষকে দেখিয়েছেন সমাধানের পথ। শুনিয়েছেন নেয়ামত ও কল্যাণের কথা।

মানুষকে ব্যর্থতামুক্ত করতে তিনি নিজেই নিয়েছেন সে ভার। এসব ব্যর্থতা ও অপারগতা থেকে বেরিয়ে আসতে শুধু প্রয়োজন তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। মানুষের কিছু ব্যর্থতা ও তার সমাধান তুলে ধরা হলো-

– মানুষ বলে, আমি ব্যর্থ!

– আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই ঈমানদার সফল হয়’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১)

– মানুষ বলে, আমার জীবনে অনেক কষ্ট!

– আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা নাশরাহ : আয়াত ৬)

– মানুষ বলে, আমাকে কেউ সাহায্য করে না!

– আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব’ (সুরা রূম : আয়াত ৪৭)

– মানুষ বলে, আমি দেখতে খুবই কুৎসিত!

– আল্লাহ বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।’ (সুরা ত্বীন : আয়াত ৪)

– মানুষ বলে, আমার সঙ্গে কেউ নেই!

– আল্লাহ বলেন, তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি এবং দেখি।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ৪৬)

– মানুষ বলে, আমার গোনাহ অনেক বেশি!

– আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)

– মানুষ বলে, আমি সব সময় অসুস্থ থাকি!

– আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৮২)

– মানুষ বলে, এ দুনিয়া আমার ভালো লাগে না!

– আল্লাহ বলেন, ‘আপনার জন্যে দুনিয়ার চেয়ে পরকালই উত্তম।’ (সুরা দোহা : আয়াত ৪)

– মানুষ বলে, সফলতা অনেক দূর!

– আল্লাহ বলেন, ‘আমার সাহায্যে একেবারেই কাছাকাছি।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১৪)

– মানুষ বলে, আমার জীবনে আনন্দ নেই!

– আল্লাহ বলেন, আপনার পালনকর্তা শিগগিরই আপনাকে এতা দান করবেন, অতপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।’ (সুরা দোহা : আয়াত ৫)

– মানুষ বলে, আমি সব সময় হতাশ!

– আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।’ (সুরা ইমরান : ১৩৯)

– মানুষ বলে, আমার কোনো পরিকল্পনাই সফল হচ্ছে না!

– আল্লাহ বলেন, আমিও কৌশল অবলম্বন করেন। মূলতঃ আল্লাহই হচ্ছেন সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৫৪)

– মানুষ বলে, আমার কেউ নেই!

– আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৩)

আল্লাহর কাছে মানুষের এতো এতো হতাশার সুন্দর সুন্দর সমাধান ও নেয়ামত থাকার পরও মানুষ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে না। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা বা সমাধান চায় না। তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর বঞ্চিত হয় মহান আল্লাহ ঘোষিত এসব অপার নেয়ামত থেকে।

সুতরাং সব হাতাশা ও ব্যর্থতায় আর কারো কাছে নয়, শুধু মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং সমাধান চাওয়াই মুমিনের জন্য উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহান আল্লাহর ঘোষিত নেয়ামত ও রহমত লাভে তার দেখানো পথে সমাধান তালাশ করার তাওফিক দান করুন। হতাশা ও ব্যর্থতামুক্ত জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।