ইফতারে মিছরি ভেজানো পানি পানের উপকারিতা জেনে নিন

1357

মিছরি ভেজানো পানি- সারাদিন রোজা রেখে শরীরকে পুনরায় চাঙ্গা করতে ইফতারে শরবত ছাড়া যেন চলেই না।

সারাদিনের তেষ্টা মেটাতে শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে প্রশান্তি খোঁজা হয়। কিন্তু সব শরবতই কি স্বাস্থ্যকর? ভাবছেন, ঘরেই তৈরি শরবত আবার অস্বাস্থ্যকর হয় কী করে?

শরবতে যে চিনিটুকু ব্যবহার করছেন, তা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী নয়। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষ’তির কারণ বয়ে আনে। তাই বলে কি শরবতে গলা ভেজাবেন না? এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন মিছরির পানি।

ছোটদের মিছরির পানি খাওয়ানো হয়ে থাকে অনেক সময়। তবে শুধু ছোটরা নয়, বড়রাও মিছরির পানি খেতে পারেন।

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মিছরির পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে। রোজা আর গরম যেহেতু একইসঙ্গে, তাই মিছরির পানি আপনাকে এই সময়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

মিছরির পানি যে শুধু খেতে সুস্বাদুই নয়, মিছরির পানিতে শরীর ঠান্ডা হয়। গরমকালে এই পানি পান করা খুবই উপকারী। বাজারে কিনতে পাওয়া নামী কোম্পানির কার্বোনেটেড কোল্ড ড্রিংক না খেয়ে মিছরির পানি খান।

মিছরির পানি গরমে আপনার শরীর শীতল করবে। মিছরি গুঁড়া করে সেটা পানিতে মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে ক্লান্তি অনুভব হয়। এদের জন্য মিছরির পানি খুবই ভালো। শরীরে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে প্রতিদিন সেহরিতে একগ্লাস করে মিছরির পানি খাওয়া দরকার।

গরমে অনেকের নাক দিয়ে র’ক্ত পড়ে। নাকের ভেকর শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এরকম হয়। এদের জন্যও মিছরির পানি উপকারী।

এছাড়াও আলসারের সমস্যায় কাজে লাগে মিছরি। মুখে আলসার থাকলে এলাচের সঙ্গে মিছরির গুঁড়া মিশিয়ে তারপর একটু পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে সেটা ঘায়ের ওপর লাগিয়ে রাখলে উপকার পাবেন।

ঘরে বসেই করোনা চিকিৎসা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কিছু পরামর্শ

ঘরে বসেই করোনা রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারেন, সব রোগীদেরই হাসপাতালে যেতে হবে না- এমন বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের। যারা স্বাভাবিক অবস্থায় তারা চাইলে ঘরেই চিকিৎসা সেরে ফেলতে পারেন।

সে সব নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কনসালট্যান্ট ডা. রাজীব কুমার সাহা।

তিনি বলেন, ‘অনেকের ধারণা করোনা পজিটিভ হলেই মনে করেন, তিনি আর বাঁচবেন না। আমি প্রথমেই বলতে চাই- করোনা মানেই জীবন’ঘা’তী কোনো রোগ নয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগীর সমস্যা জটিল নয়।

অন্যসব সাধারণ ঠান্ডা, কাশি, জ্বরের মতো তাদেরও বাসায় চিকিৎসা করা সম্ভব। অবশ্য এক্ষেত্রে তাদের বাসায় কিছু পরিবর্তন এবং কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাহলে করোনার ভ’য়াল থাবা থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’

পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের রোগীরও করোনার চিকিৎসা বাসায় থেকে হচ্ছে। এটি খুব স্বাভাবিক। বিষয়টিকে ‘হোম আইসোলেশন’ পদ্ধতি উল্লেখ করে ডা. রাজীব কুমার সাহা করোনা পজেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পরামর্শ দেন:

১- বাসায় রোগীর জন্য অবশ্যই আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। ২- আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। ৩- রোগীর জামা-কাপড়, ব্যবহারের জিনিসপত্র সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে।

৪- রোগী পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে চার সপ্তাহ আলাদা থাকবেন। তবে একই পরিবারের সবাই কো’ভিড-১৯ পজিটিভ হলে তারা একসঙ্গে থাকতে পারবেন।

সেক্ষেত্রে পরিবারের কেউ বাইরে যেতে পারবেন না অথবা বাইরে থেকে কেউ বাসায় প্রবেশ করতে পারবেন না। ৫- বাসায় রোগী এবং অন্যান্য সবার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ৬- হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করতে হবে। ৭- রোগীকে বাসায় পর্যাপ্ত পরিমাণে (দিনে দুই থেকে তিন লিটারের মতো) পানি খেতে হবে।

৮- গরম পানি দিয়ে দিনে ২-৩ বার গার্গেল করতে হবে। তবে গরম পানি পানের প্রয়োজন নেই। ৯- সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে। তবে ভিটামিন-সি যুক্ত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। লেবু, কমলা, মাল্টা বেশি খেতে পারেন।

১০- বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া প্রয়োজন। এতে রোগ সংক্রমণ আশঙ্কা কমানো সম্ভব। ১১- বাসার মেঝে জীবাণুমুক্ত করতে বারবার অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

করোনায় আক্রান্ত রোগী কী ধরনের ওষুধ গ্রহণ করবেন। এ প্রসঙ্গে ডা. রাজীব কুমার সাহা বলেন, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। তিনিই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। তবে-

১- সাধারণ ভাবে জ্বর, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথার জন্য রোগী তিন বেলা প্যারাসিটামল খাবেন। জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে। ২- ঠান্ডা, শুকনো কাশির জন্য এন্টি হিস্টামিন যেমন ফেক্সোফেনাডিন, লরাটিডিন, রুপাটিডিন ইত্যাদি খাওয়া যাবে।

৩- বাসায় নেবুলাইজার দিয়ে গ্যাস দেওয়া যাবে না। ৪- অন্যান্য কিছু ওষুধ প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে পারবেন। যেমন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। ৫- ডায়াবেটিস, উচ্চ র’ক্ত’চাপের ওষুধ আগে থেকে যারা খাচ্ছেন তারা সেগুলো চালিয়ে যাবেন।

মনে রাখতে হবে, রোগী মানসিক ভাবে সুস্থ থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন থাকবে এবং তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন। তাছাড়া যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে যাওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। কী কারণে হাসপাতালে যেতে হতে পারে এ প্রসঙ্গে ডা. রাজীব কুমার সাহা বলেন, যাদের বাসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ আলাদা কক্ষ নেই, দেখাশোনা করার লোক নেই বা পরিবারে সদস্য সংখ্যা অনেক। এছাড়া-

১- রোগীর যদি শ্বাসকষ্ট থাকে। ২- রোগীর যদি কাশি বা জ্বর অনেক বেড়ে যায়। ৩- রোগী যদি অতিরিক্ত দুর্বল অথবা অজ্ঞান হয়ে যায়। ৪- যাদের অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, ক্যানসারসহ জটিল রোগ আছে।

সবশেষে এই মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন, এ সময় সব ধরনের গুজব এবং ভিত্তিহীন অপপ্রচার এড়িয়ে চলতে হবে। সারাদিন করোনা নিয়ে চিন্তায় পড়ে থাকবেন না। নিজ ধর্ম চর্চার প্রতিও তিনি এ সময় মনোযোগী হতে বলেছেন। তবে অবশ্যই তা সম্মিলীত ভাবে নয়।