উপুড় হয়েই নামাজ ও কোরআন পড়ে হাত-পা বিহীন ছেলেটি !

1640

নাম টিও সাতরিও। ছেলেটির বয়স ১৫ বছর, হাত-পা নেই তার। চলা-ফেরা করতে হয় তার গড়িয়ে-গড়িয়ে। আর এভাবেই উপুর হয়ে শুয়ে নামাজ ও কোরআন পড়ে ছেলেটি। হাজারো বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও কোরআন শিক্ষা নিতে ভুলেনি সে।

তার পরিবারের সঙ্গে সে বসবাস করে। জন্মগত ভাবেই টিও হাত-পা বিহীন। তার মতে, হাত-পা থাকলে আমি বাবা মাকে সাহায্য করতে পারতাম। কোরআন শিক্ষার জন্য নিজেই স্কুলে যেতে পারতাম। আমার শিক্ষকদেরকে বাড়ি বয়ে এসে নিয়ে যেতে হতো না।

ছোট্ট এই কিশোরের স্বপ্ন ছিল পুলিশ অফিসার হওয়ার। টিও বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে আমি অবশ্যই তা হতে পারতাম। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তা আর সম্ভব নয়। তাই সেই স্বপ্ন আর দেখি না। কিছু কাজ আছে যেগুলো আমি করতে পারি না। যেমন- একা খেতে পারি না, গোসল এমনকি কাপড় পরতেও পারি না। তবে আমি মুখ দিয়ে লিখতে পারি। লেখা-পড়া এমনকি ভিডিও গেম খেলতেও পছন্দ করি আমি।

ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। হয়তো ভাবছেন হাত পা ছাড়া আমি কী ভাবে খেলি ? মাঝে-মাঝে মুখ দিয়েই আমি বল খেলি। আর ভিডিও গেম খেলার সময় চিবুক ও কাধের সাহায্য নিতে হয়। অন্যান্যদের মতো আমিও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি। এমনকি ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ সবই ব্যবহার করি আমি। ঠোঁটের সাহায্যে ফোন চালাই আমি।

টিও’র মা মিমি বলেন, তাকে খাওয়ানো ও দেখ-ভালের সব দায়িত্বই আমি পালন করি। আর গোসল ও কাপড় পরায় তার বাবা। ভিডিও গেইমের প্রতি তার আকর্ষণ অনেক। এ ছাড়াও তার মেধার প্রশংসা স্বয়ং স্কুলের প্রিন্সিপাল পর্যন্ত করেন। গণিতে বেশ দক্ষ সে। টিওকে নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।

আমার মোট তিনটি সন্তান। টিওর বড় ভাই বোনেরা স্বাভাবিক ও সুস্থ। তবে সে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নেয়। প্রথমে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। বর্তমানে সত্যিই আমি টিওর জন্য অনেক গর্বিত। সে আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। মুখ দিয়েও সুন্দর করে লিখতে পারে আমার ছেলে। তার গুণের শেষ নেই। আমরা তাকে স্বাভাবিক মানুষই ভাবি।

আমার জীবন অনেক কঠিন টিও অনেকটা গম্ভীর সুরে বলছিলেন। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি। তবে আমার স্কুলের প্রিয় বন্ধু ও সহপাঠি টেন্ডিকে দেখে আমি নতুন ভাবে বাঁচতে শিখেছি। সেও এক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানুষ হয়েও অসম্পূর্ণ। কারণ সে কানে শোনে না। অথচ আমি কথাও বলতে পারি আবার কানেও শুনি। তাই টেন্ডিকে দেখলে নিজের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়।

টেন্ডি কানে না শুনলেও সবকিছুই শিখতে ও জানতে চায়। আমরা দু’জনই একে অপরকে সাহায্য করি। সে হয়ে উঠেছে আমার হাত আর আমি হলাম তার কান। এতো দিনে বুঝেছি আমাকে লড়তে হবে। আশা হারালে চলবে না। সবাইকে বলছি, আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। হাল ছাড়বেন না, হতাশ হবে না।

শারীরিক ভাবে আমি অক্ষম হলেও আমি নিজেকে সেভাবে ভাবি না। কারণ আমি আমার জীবন, প্রার্থনা ও নিরন্তর লড়াইয়ের মাধ্যমে কিছু একটা করতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।