করোনা হয়েছে নাকি সাধারণ সর্দি-কাশি, কীভাবে বুঝবেন ?

913

করোনায় আ’ক্রা’ন্ত না কি সাধারণ ফ্লু, বুঝব কীভাবে?- করোনা ভা’ইরা’স মূলত সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বহনকারী গ্রুপ। এই গ্রুপের ভা’ইরা’স বছর দশেক আগেও এত ভয়াবহ ছিল না। আমরা প্রত্যেকেই এর প্রকোপে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগেছি। আবার সুস্থও হয়ে উঠেছি নিজের নিয়মে।

তবে জিনগত মিউটেশনের ফলে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এতই মা’রাত্ম’ক হয়ে উঠল যে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা ‘কভিড-১৯’ নাম নিয়ে আসা এই ভা’ইরা’স ইতিমধ্যেই আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্ত ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, জ্বর-সর্দি-হাঁচি-কাশি হলে এত দিন যা করছিলেন তাই করবেন।

ঘরে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেবেন। হালকা খাবার খাবেন। উষ্ণ পানি পান করবেন পর্যাপ্ত। দরকার মতো প্যারাসিটামল, কাশির ওষুধ খাবেন একটু আধটু। নরমাল স্যালাইন ড্রপ দেবেন নাকে। হাঁচি-কাশির সময় পরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করবেন। শিশু, বয়ষ্ক, রুগ্ন ও গর্ভবতীদের থেকে দূরে থাকবেন।

এটুকু করলেই ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমেই ভা’ইরা’সকে কাবু করা যাবে। তখন বুঝতে হবে এটা সাধারণ ফ্লু-ই ছিল। যদি ১০ দিনেও অসুখ না কমে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। করোনা হয়েছে কি না তা বুঝতে পরীক্ষার ব্যবস্থা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

মেডিক্যাল টিম ঠিক করবে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য ওষুধ খেতে হবে কি না। আপনার যদি কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর না থাকে, অর্থাৎ সম্প্রতি বিদেশ যাননি বা আশপাশে এ ধরনের রোগী নেই, তা হলে ভয় তুলনায় অনেক কম। করোনাভা’ইরা’স যদি ১০০ জনকে সংক্রামিত করে তার মধ্যে ১০-১৫ কি ২০ জনের অবস্থা জটিল হয়।

বিপদ হয় দু’-এক জনের। বাকি ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষের সাধারণ ভা’ইরা’স সংক্র’মণের মতো উপসর্গ হয়। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা নিজের নিয়মেই কমে যায়। তবে এরা অসুস্থ শরীরে রোগ ছড়াতে পারে। কিন্তু তাতেও উদ্বেগের কিছু নেই। করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে এমন কোনও জায়গায় যদি সফর না করে থাকেন, তা হলে নূন্যতম সচেতনতা মেনে চললেই হবে।

কিছু বিষয় মাথায় রাখুন। কারও যদি হার্ট-লাং-কিডনি-লিভারের ক্রনিক অসুখ না থাকে, বা কোনও অসুখ বা ওষুধের কারণে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না যায় কিংবা বয়স খুব বেশি না হয়, তা হলে অত ভয়ের নেই। সে ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করা যেতে পারে।

তার পর যদি দেখা যায় উপসর্গ কমার বদলে বাড়ছে, প্রবল জ্বর উঠছে বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, রক্তচাপ কমে মাথা ঘুরছে, প্রলাপ বকতে শুরু করছেন, তা কিন্তু বিপদের লক্ষণ। করোনাভা’ইরা’সের প্রতিষেধক বা নির্দিষ্ট ওষুধ কিছু নেই। উপসর্গ হলে তবে তা কমানোর চিকিৎসা করা হয়। আর এতেই ৯৭-৯৮ শতাংশ মানুষ সেরে যান। বেশি ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে দ্রুত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

কীভাবে ছড়ায় এই করোনা ভা’ইরা’স?

মূলত কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে করোনা ভা’ইরা’স ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। অর্থাৎ কাশি শিষ্টাচারকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

অসুস্থ ব্যক্তির সাধারণত ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণ দেখা যায়। তিনি যদি হাঁচেন বা কাশেন, তাহলে তাঁর সেই হাঁচ বা কাশি থেকে ভা’ইরা’স ঢুকতে পারে সুস্থ মানুষের শরীরে। সুস্থ মানুষের চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে ঢুকতে পারে সেই ভা’ইরা’স।

কতটা দূরত্ব বজায় রাখবেন? আ’ক্রা’ন্ত হওয়ার আশঙ্কা এড়াতে পাশের ব্যক্তির সঙ্গে অন্তত ১ মিটার বা ৩ ফুটের দূরত্ব রাখা উচিৎ। কোন কোন জিনিস থেকে ছড়াতে পারে করোনা ভা’ইরা’স? ভা’ইরা’স ছড়ানো কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে ভা’ইরা’স। তাই কয়েকটি জিনিস থেকে সাবধানে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

সেগুলি হল, পেন, দরজার নব, ট্রেনের হাত রাখার জায়গা, চায়ের কাপ, টিস্যু, সিঁড়ির হাতল, লিফটের সুইচ, কম্পিউটারের মাউস, চামচ বা চপস্টিক।

করোনা হয়েছে মনে হলে বা আক্রান্ত সন্দেহ হলে যে নম্বরে ফোন দেবেন

চীন দেশের উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রা’ণঘা’তী করোনাভা’ইরা’স বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আমাদের বাংলাদেশের নাম। গতকাল শনিবার ইতালি ফেরত দুইজন সহ মোট তিনজন বাংলাদেশি নাগরিকের শরীরে করোনা ভা’ইরা’স শনাক্ত হয়।

আজ ৮ই মার্চ রবিবার দুপুরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।

শরীরে করোনার লক্ষণ উপলব্ধি করার পর ওই রোগীরা নিজ থেকেই আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এরপরই তাদের নমূনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় তারা করোনায় আ’ক্রা’ন্ত। হটলাইন নম্বরগুলো হলো: ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১।

যদি কারও মধ্যে শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, হাসপাতালে যাবেন এবং আমাদের সাথে হট-লাইনেও যোগাযোগ করবেন। আপনারা যেসব হাসপাতালে যাবেন সেখান থেকেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিশ্চিত করা হবে করোনা আছে কি-না।