
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ- পাকা কলার মতো কাঁচা কলাতেও রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। এটি প্রাকৃতিক পটাশিয়ামের চমৎকার উৎস। পটাশিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া ভিটামিন-বি৬ ও ভিটামিন-সি পুষ্টি যোগায় শরীরকে।
পুষ্টিবিদদের মতে, পেটের অসুখে উপকার পাওয়া ছাড়াও কাঁচা কলায় রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। প্রাচীন কাল থেকে আলসার, সংক্রমণ, ডায়রিয়া এমনকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পথ্য হিসেবে কাঁচা কলার ব্যবহার প্রচলিত।



একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শুধু পেট খারাপের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে নয়, আরও বেশ কিছু জটিল রোগের চিকিৎসাতে কাঁচা কলার কোনোর বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ কলাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, পটাশিয়াম, বিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং আরও নানা উপকারি উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধন করে।
খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি-৬ রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি-৪ রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।



কাঁচা কলা এক দিকে যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, অপরদিকে এর প্রচুর ঔষধি গুণও রয়েছে।
১- কাঁচা কলায় বেশি মাত্রায় স্টার্চ বা শ্বেতসার, ‘শর্ট-চেইন’ ফ্যাটি অ্যাসিড ও নানান ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। এতে পটাশিয়াম, খাদ্য আঁশ ও সামান্য প্রোটিনও আছে। মাঝারি মাপের কাঁচা কলা থেকে ৮১ ক্যালরি পাওয়া যায়।
২- উচ্চ মাত্রায় স্টার্চ ও খাদ্যআঁশ থাকায় কাঁচা কলা হজমে সহায়তা করে এবং পেটের সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে। এটা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।



৩- কাঁচা কলায় আছে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম যা রক্তনালী ও ধমনীর চাপ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে প্লাক জমে ধমনী সরু হয়ে যাওয়া, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। কাঁচা কলা ক্ষুধার অনুভূতি কমায় ও পেট ভরা রাখে। এটি খাবারের চাহিদা কমিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪- কাঁচা কলার ভিটামিন বি-সিক্স রক্তের গ্লুকোজ বিশেষ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটা রক্তে ইন্সুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে এবং উচ্চ আঁশ-জাতীয় হওয়ায় রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৫- কাঁচা কলায় রয়েছে নানান খনিজ উপাদান, যা ডায়রিয়া এবং এই রোগের লক্ষণসহ মাথাব্যথা ও দুর্বলভাব দূর করে।



৬- কাঁচা কলা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কিডনি বা বৃক্কের কাজে সহায়তা করে। প্রতিদিন কাঁচা কলা খেলে বৃক্কের সমস্যা দূর হয়, বিশেষ করে ‘কিডনি ক্যান্সার’।
কাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি হৃদরোগের ঝুঁকি কম?
যারা শুধু শাক-সবজি খেয়ে বেঁচে থাকেন, কোনো প্রকার প্রাণীর মাংস খাদ্য তালিকায় রাখেন না। এমনকি পোল্ট্রি, মাছ, দুধ, ডিম, মধু জাতীয় খাদ্যও গ্রহণ করেন না। তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।



ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শুধু শাক-সবজি খেয়ে বেঁচে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম হলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। জানা গেছে, গবেষণার স্বার্থে ৪৮,০০০ জন মানুষের উপর ১৮ বছর ধরে এই পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছে।
এদের মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ ছিলেন নিরামিষাশী, ৭ হাজার ৫০০ জন প্যাস্কাট্যারিয়ান (যারা মাছ খায়, কিন্তু মাংস খায় না), এবং বাকীরা আমিষাশী (যারা মাছ-মাংস খায়)।
পর্যবেক্ষণ চলাকালে ২ হাজার ৮২০টি করোনারি হৃদরোগ এবং ১ হাজার ৭২টি স্ট্রোকের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়।



এতে দেখা গেছে, যারা মাংস খায় তাদের তুলনায় প্যাস্কাট্যারিয়ানদের করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি ১৩% কম এবং নিরামিষাশীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ২২% পর্যন্ত কমে যায়।
কিন্তু আশঙ্কার কথা হলো- ‘নিরামিষাশী’দের হৃদরোগের ঝুঁকি কম হলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২০% বেশি।
গবেষকেরা ধারণা করছেন, ভিটামিন বি-১২’এর স্বল্পতার কারণে এমনটা ঘটে থাকতে পারে। তবে এ রহস্য উন্মোচিত হতে আরও সময়ের প্রয়োজন।



তবে নিরামিষ খাদ্যাভাস স্বাস্থ্য সম্মত নয়, এমন কথা নিশ্চিত হয়ে বলার সময় এখনও আসেনি।
ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ড. ফ্রাঙ্কি ফিলিপ বলেন, এমন কিছুই এখনও বলা সম্ভব না। কারণ এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা ছিল। তারা দেখেছে যে, লোকগুলি কি কি খাচ্ছিল এবং বছরের পর বছর ধরে তাদেরকে অনুসরণ করেছে, তবে এটি সেই অর্থে কোনো কার্য-কারণ নয়। এখানে বার্তাটি খুব পরিষ্কার যে, সবার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যাভাস জরুরি।
গবেষকরা মনে করেন, যারা একেবারেই মাছ-মাংস খাচ্ছেন না, তাদের উচিৎ খাদ্য তালিকার ‘ভিটামিন বি-১২’ সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করা।