
প্রকৃতির অমূল্য দান সরিষার তেল। কেবল স্বাদের জন্য নয়। বহুকাল ধরে এই তেল ব্যবহারের পেছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ। শুধু খাবার রান্নাতেই নয়, ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে চুলেও সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়।
মাছ ও ডিম ভাজা, ভর্তা বা ঝাল মুড়ির জন্য সরিষার তেল ছাড়া অনেকে চিন্তাই করতে পারেন না। এটি কেবল স্বাদের জন্য নয়। বহুকাল ধরে এই তেল ব্যবহারের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। বলা হয়, সরিষার তেল হলো এ অঞ্চলের অলিভ অয়েল।



সরিষা বীজ থেকে তৈরি হয় সরিষার তেল। এটি গাঢ় হলুদ বর্ণের এবং বাদামের মতো সামান্য কটু স্বাদ ও শক্তিশালী সুবাস যুক্ত তেল। ওমেগা আলফা-৩ ও ওমেগা আলফা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়।
সরিষার তেল ওষুধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই তেলের গুণাগুণ সম্পর্কে যারা অবগত, তারা নিয়মিতই ব্যবহার করে চলেছেন।
সমীক্ষায় দেখা যায়, সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিণ্ড–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। এছাড়া সরিষা তেল ঠাণ্ডা ও কাশি উপশমে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, সরিষার তেল চুল ও ত্বকের যত্নেও কাজে লাগে।



চলুন জেনে নিই, সরিষার তেলের যত বিস্ময়কর গুণ রয়েছে-
জ্বর সারাতে- সরিষার মধ্যে আছে সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। ফলে এর তেল হাঁপানি, ঠাণ্ডা জ্বর, সর্দি, কফ, কাশি ইত্যাদি থেকে রেহাই দিতে পারে।
হজমশক্তি বাড়ায়- সরিষায় আছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ফলিক অ্যাসিড, নিয়াসিন ও থায়ামিন, যা শরীরে মেটাবলিজমের পরিমাণ বাড়িয়ে হজমে শক্তি যোগায়।



প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন- সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই থাকে। এই তেল ক্ষ’তি’কর অতিবেগুনি রশ্মিসহ অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। এই তেলে থাকা ভিটামিন-ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই তেল যেহেতু ঘন, তাই ত্বকে লাগানোর পর ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে, যেন অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে।
চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক- সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেলে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এতে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে।



চুল পাকা রোধ করতে- সরিষা তেলের পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, মিনারেল চুলের অকালপক্বতা রোধ করে থাকে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই তেল মালিশ করুন চুল এবং মাথার তালুতে যা আপনার চুল পাকা রোধ করবে।
বাত দূর করে- বাতরোগ ও হাড়ের জোড়ায় ব্যথা উপশমে আক্রান্ত স্থানে সরষে বাটা বা তেল মালিশ করলে আরাম পাওয়া যাবে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়- সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই এটি ক্যানসারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে।



ঠোঁট ফাটা রোধ করে- ঠোঁট ফাটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকের এই সমস্যা এত বেশি হয়ে থাকে যে লিপবাম কাজ করে না। অল্প একটু সরিষার তেল নিয়ে ঠোঁটে লাগান। এই প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ঠোঁটফাটা রোধ করে ঠোঁট নরম কোমল করে তোলে।
সতর্কতা- ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে জেনে নিতে হবে যে সরিষার তেল খাঁটি কি না? নকল বা ভেজাল সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে ক্ষ’তি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। দোকানের খোলা সরিষার তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখ-বিসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাঁটি সরিষার কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।
শরীরে র”ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পেয়ারা
একটি পেয়ারাতে রয়েছে চারটি আপেল, চারটি কমলা লেবুর সমান খাদ্যগুণ। দেশী ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি ফল। সাধারণ এবং সহজলভ্য এই ফলটির পুষ্টিগুণ অনেক। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ পানি, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি, কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, এবং খনিজ পদার্থ। এক কথায় পেয়ারার পুষ্টিগুন অনেক।



পেয়ারার পুষ্টিগুণ: পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। একটি পেয়ারাতে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে একটি মাঝারি আকৃতির কমলা থেকে। ১০ গুণ বেশি ভিটামিন এ রয়েছে লেবুর তুলনায়। এ ছাড়া ভিটামিন বি২, ই, কে, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম রয়েছে।
উপকারিতা:
১। রো’গ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি– পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। যা রো’গ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রো’গের সাথে যু”দ্ধ করার শক্তি প্রদান করে।



২। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস- পেয়ারাতে লাইকোপিন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন এর মত অনেকগুলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যা’ন্সা’রের কোষ বৃদ্ধি রো’ধ করে। এটি প্রোসটেট ক্যা’ন্সা’র এবং স্তন ক্যা’ন্সা’র প্রতিরোধ করে।
৩। হার্ট সুস্থ রাখতে– ১৯৯৩ সালে “Journal of Human Hypertension” এ প্রকাশিত হয় যে নিয়মিত পেয়ারা খেলে র”ক্ত চাপ ও র”ক্তে’র লিপিড কমে।
পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন সি রয়েছে। পটাশিয়াম নিয়মিত হৃদস্পন্দনের এবং উচ্চ র”ক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ভাবে লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রো’গে’র ঝুঁ’কি কমায়।



৪। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে- চাইনিজ চিকিৎসা শাস্ত্ররে অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা ব্যবহার হয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে American Journal of Chinese Medicine প্রকাশ করেন যে, পেয়ারার রসে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারা পাতাও বেশ কার্যকর। কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে ১ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে তারপর ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন প্রতিদিন।
৫। ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে- বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে পেয়ারা।



উচ্চ পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় এটি শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়। তবে কাঁচা পেয়ারা ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে কার্যকর। ৬। র’ক্ত’চাপ নিয়ন্ত্রণে- পেয়ারা র’ক্ত’চাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পটাশিয়াম র’ক্ত’চাপ কমাতে সাহায্য করে। ৭। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে- ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী।
এতে থাকা ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে এবং রাতকা’না রো’গ প্রতিরোধ করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখুন। কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন এ এর ভাল উৎস।