
হার্টের ব্যথাকে বেশির ভাগ মানুষ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় সে ঘুম আর ভাঙে না। পাশে শুয়ে থাকা মানুষটিও টের পায় না রাতে কিভাবে লোকটি হার্টব্লক করে মারা গিয়েছে।



গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা:
সাধারণত এই ব্যথা পেটের উপরের অংশে হয় এবং নির্দিষ্ট একটা জায়গাজুড়েই হয়। শরীরের অন্য অংশে এই ব্যথা ছড়ায় না।
হার্টের ব্যথা:
যেহেতু আমাদের হার্ট বুকের বাম পাশে তাই হার্টের ব্যথা বুকের বামপাশ কিংবা মাঝখান থেকে শুরু হয়ে ঘাড়, বাম বাহু বা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে, অনেকটা হাতির পা বুকে চাপ দিলে যেমনটা হয় ঠিক তেমনি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভারী পাথর বুকের উপর রাখলে যেমনটা ফিল হয় অনেকটা সেরকম।



এই ব্যথায় রোগী শুয়ে থাকলে কিংবা দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলেও নিজেই নিজের হাতে বুকের বাম পাশটা চেপে ধরে বসে পড়েন।
হার্টের ব্যথায় প্রাথমিক চিকিৎসা:
যে কোন বয়সে যে কোন সময় হার্টের ব্যথা উঠতে পারে। সেই ব্যথা কয়েক মিনিটে রোগী মারাও যেতে পারে। যদি আপনার ঘরোয়া চিকিৎসা জানা থাকা তবে প্রাথমিকভাবে মানুষটি বেঁচে যাবে।



হার্টের ব্যথা হলে যা করবেন:
একসঙ্গে ৪টা এস্পিরিন 75 mg (যা দোকানে ইকুস্প্রিন নামে পাওয়া যায়) পানিতে গুলিয়ে খাইয়ে দিন। কারণ ট্যাবলেট আমাদের শরীরে পৌঁছে কাজ করতে যে সময় নিবে সে সময়ের মধ্যে রোগী মারাও যেতে পারে।
সেই দিক থেকে লিকুইড তাড়াতাড়ি কাজ করে। যদি মনে হয় ব্যথাটা হার্টের তাহলে জিহ্বার নিচে নিটোকার্ড নামক স্প্রে দুইবার দিন। দেখবেন রোগী অনেকটা সুস্থ বোধ করছে। এরই মধ্যে হসপিটাল নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন।



হার্টের ব্যথায় কখনোই যা করবেন না:
হার্টের ব্যথায় রোগীর শরীরে ঠাণ্ডা ঘাম বের হওয়া স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে রোগীরর বাড়ির লোকজন ১৮ ডিগ্রী সে. এসি চালিয়ে দেন। এতে ঠান্ডায় ব্লাড ফ্লো কমে যায়।
তাই এসি না চালিয়ে নরমাল ফ্যানের বাতাসে রোগীকে রাখুন। অনেকেই আবার এই ব্যথায় রোগীকে সোজাসুজি শুইয়ে দেন। আরো একটি ভুল পদ্ধতি। যেহেতু ব্লাড সার্কুলেশনের অভাবে হার্ট অ্যাটাক হয়।
এই সময় রোগী শুয়ে থাকলে ব্লা”ডে”র গতি আরো কমে যায়। তাই রোগীকে খাটে বসিয়ে পিঠের পেছনে বালিস দিয়ে হেলান দিয়ে রাখুন।



সতর্ক থাকুন, নিজে বাঁ’চু’ন, প্রিয়জনের জীবন বাঁ’চা’তে এগিয়ে আসুন।
হার্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি পৃথিবীর ১০ জনের একজন। হার্ট সুস্থ রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের এই চিকিৎসক।
১. খাবারে আমিষের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তবে শর্করা এবং চর্বিজাত খাবার কম খেতে হবে। ২. একটানা বেশি সময় বসে থাকা যাবে না। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন আধা ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে।
৩. ধূ’ম’পান ত্যাগ করতে হবে। ৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ৫. র’ক্তচাপ এবং সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।



৬. শাক জাতীয় নয়, এমন খাবার (যেমন মাছ) খাওয়া হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী নয়। ৭. ত্রিশোর্ধ্ব সবার উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
৮. জীবনে সব কিছু নিখুঁত হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাই জীবনের প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। ৯. জগিং করার চেয়ে হাঁটা ভালো। জগিং করলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়।
১০. অনিয়মিত খাদ্যাভাস মানুষকে জাঙ্ক ফুডের দিকে ঠেলে দেয়। আর তখনই হজমের জন্য ব্যবহৃত এনজাইমগুলো দ্বিধায় পড়ে যায়। তাই নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, হাঁটাহাঁটি এবং আখরোট খেতে হবে।
১১. হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার ফল এবং সবজি। আর সবচেয়ে খারাপ তৈলাক্ত খাবার। যে কোনও তেলই খারাপ।



১২. নিয়মিত র’ক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুগার এবং কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। তাছাড়া র’ক্ত’চাপ পরিমাপও জরুরি।
১৩. হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে প্রথমে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর জিহ্বার নিচে একটি এ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখতে হবে। যদি পাওয়া যায় তবে এ্যাসপিরিনের পাশাপাশি একটি সরবিট্রেট ট্যাবলেটও রাখতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।