জন্ডিস হলে কী খাবেন আর কী খাবেন না জেনে রাখুন…

2254

জন্ডিস নিজে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের লক্ষণ। লিভারের সমস্যা ছাড়াও রক্তের রোগ কিংবা পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহ পাথর, ক্যান্সার কিংবা অন্য কোনো কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলেও জন্ডিস হতে পারে।

জন্ডিস বলতে সাধারণত আমরা লিভারের একিউট প্রদাহ বা একিউট হেপাটাইটিস জনিত জন্ডিসকেই বুঝে থাকি। ভাইরাস থেকে শুরু করে নানা ধরণের ওষুধ, এলকোহল ইত্যাদি অনেক কারণেই লিভারে একিউট হেপাটাইটিস হতে পারে।

আমাদের দেশে একিউট হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই, এ এবং বি ভাইরাস। এর মধ্যে প্রথম দু’টি পানি ও খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত র’ক্তে’র মাধ্যমে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ, তবে যে কোন বয়সের মানুষই হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসে আ’ক্রা’ন্ত হতে পারেন।

জন্ডিস হলে রোগীর পথ্য কী হবে, তা নিয়ে অনেকের ভেতর অনেক ভ্রান্তি রয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। জন্ডিস হলে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যাতে যকৃৎ কিংবা পিত্তথলির ওপর কোনো চাপ না পড়ে। অল্প করে একটু পরপর সঠিক খাবার খেলে এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকলে এমনিতেই জন্ডিস সেরে যায়।

চলুন জেনে নিই, জন্ডিস হলে যা খাবেন-

গোটা শস্য- কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণে বাদামি চাল, রুটি, ওটস খেতে পারেন। গোটা শস্যে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন থাকে, যা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়।

সবজি- মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, মুলা, বিট, গাজর, টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পালংশাক জন্ডিস রোগীর জন্য খুব ভালো।

প্রোটিন- অনেকে মনে করেন, জন্ডিসে আ’ক্রা’ন্ত রোগী মাছ-মাংস জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। এটা আসলে ভুল ধারণা। খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল পরিমাণ মতো থাকতে হবে। না হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে।

ফল- বেরিস, পেঁপে, তরমুজ, আনারস, পাকা আম, কলা, কমলা, জলপাই, অ্যাভোকাডো, আঙুরের মতো সহজপাচ্য ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার- লেবু, বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো। এগুলো শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া প্রতিদিন বাদামও পরিমাণমতো খেতে পারেন। সামান্য আদা কুচি বা রসুন কুচি, আদার রস বা আদা-চা খাওয়া যেতে পারে দিনে দু-একবার। এগুলো যকৃতের জন্য ভালো।

পানি- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি (দৈনিক অন্তত আট গ্লাস) পান করতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি পানের প্রয়োজন নেই। পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। আখের রস, ডাবের পানিও শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে।

যা খাওয়া যাবে না- ১- জন্ডিস হলে ফুল ক্রিম দুধ বা দই, পনির খাওয়া ঠিক নয়। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা যকৃতের জন্য ক্ষতিকর।

২- চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, কাঁচা লবণ, অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার, রেড মিট (গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস), অ্যালকোহল, ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

লিভারে চর্বি কমাতে তেঁতুলের উপকারিতা

বর্তমানকালে অনেকেরই লিভারে চর্বি জমছে। লিভারে চর্বি জমা থেকে বিরত রাখতে কী করা যায় ? কী খাব, কী খাব না ? এমন প্রশ্ন অনেকের।

একটু বয়স বাড়লেই লিভারে চর্বি জমার সমস্যা দেখা দেয়। এতে শরীরে বাসা বাধে নানাবিধ অসুখ। তাই অতিরিক্ত চর্বি জমছে এমন হতে দেখলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর তখনই আমরা মুঠো মুঠো ওষুধ খাওয়া শুরু করি।

কিন্তু কিছু প্রাকৃতিক খাদ্য আছে যা খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। সেই খাদ্যটি হলো তেঁতুল। লিভারে যে কোন সমস্যায় তেঁতুল বেশ উপকারি।

তেঁতুল আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখে। এছাড়াও খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বং’স করে।

কী ভাবে তেঁতুল খেলে উপকার পাবেন–

খোসা ছাড়ানো তেঁতুলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ভালভাবে তৈরি হয়ে গেলে সেটি ছেকে নিন। এর পর ছেকে নেওয়া পানিতে সামন্য মধু মিশিয়ে সকাল-বিকেল দু’বেলা খান।

তেঁতুলের এই পানি খাওয়ার ফলে আর কী কী উপকার পাওয়া যাবে তা জেনে নিন…

১- হৃদরোগের যাবতীয় সমস্যা দূর করে এই তেঁতুল পানি।

২- কোলন ক্যান্সারের মতো রোগ থেকেও রেহাই দেয় এই পানি।

৩- তেঁতুলে থাকা লয়াক্সেটিভ কোষ্ঠকাঠ্যিন্যের মতো সমস্যা দূর করে।

৪- এছাড়াও তেঁতুলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি বুড়িয়ে যাওয়া ত্বককে রক্ষা করে।

৫- এই তেঁতুল শরীর থেকে ক্ষ’তি’কর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং লিভারে জমা ফ্যাট গলাতে সাহায্য করে।