
ভারতের কর্নাটকের মঙ্গলুরুর নামক অঞ্চলের বাসিন্দা আবদুর রহমান, পেশায় একজন শ্রমিক। বহু বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ জমা করছিলেন। জমানো সেই অর্থ দিয়ে মক্কা ও মদীনায় হজ পালন করতে যাবেন তিনি।
আবদুর রহমান এই ইচ্ছা হয়তো আগামী বছরই পূরণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করলেন, করোনা মহমারিজনিত কারণে জীবিকা হারিয়েছেন বা খাবার খেতে পারছেন না, এমন ব্যক্তির মুখে খাবার তুলে দেওয়া এখন সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।



তাই হজের জন্য জমানো অর্থ দিয়ে কিনে নিলেন খাবার সামগ্রী। তুলে দিলেন অনাহারীদের মুখে। আবদুর রহমানের ছেলে ইলিয়স। তিনি বলেন, অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মতো আমার বাবাও হজে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চিন্তা করলেন এই দুঃসময়ে যারা না খেয়ে আছেন তাদের হাতে খাবার তুলে দেওয়া উচিত।
আবদুর রহমানের ছেলে ইলিয়স বলেন, আমার বাবা একজন খামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন এবং আমার মা বাড়িতে বিড়ি তৈরি করেন। আমার বাবা বহু বছর ধরে ইসলামের পবিত্র স্থানগুলো দেখার জন্য অর্থ জমাচ্ছিলেন। হজ পালন করতে চেয়েছিলেন।



তিনি আরো বলেন, আমার বাবা এই দুঃসময়ে অনুভব করলেন যে অর্থ জমিয়ে রাখলে অভি’শাপ বয়ে আনবে। তাই তিনি নিজের সঞ্চয় দিয়ে ক্ষুধার্তদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আবদুর রহমানের বানটওয়াল তালুকের গুডিনাবালি গ্রামে ২৫টি পরিবারের মাঝে চাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে যারা অর্থ উপার্জন করতে পারছেন না তাদের দুর্দশা দেখে আমি দুঃখ পেয়েছিলাম। তাই আমি তাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তিনি কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন; সেই বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডয়া।



খাবারের জন্য পুলিশকে ঘেরাও করল ক্ষুধার্ত পাখির ঝাঁক !
অভুক্ত পাখিগুলোকে খাবার খাওয়ান তিনি – চারদিকে সুনসান নীরবতা। প্রায় নিস্তব্ধ চুয়াডাঙ্গা শহর। নেই মানুষের কোলাহল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ এখন ঘরবন্দি। দোকানপাট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট সব কিছু বন্ধ।
শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁর উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে দিন কাটত যেসব পশু পাখির, তারা এখন অভুক্ত। খাবারের জন্য এবার সেই পাখিরা পুলিশকে ঘেরাও করেছে।



চুয়াডাঙ্গার এমন একটি ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল পেজে শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শতশত শালিকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পুলিশকে ঘিরে ধরেছে।
কিচির-মিচির শব্দে খাবার প্রত্যাশা করছে পুলিশ সদস্যের কাছে। পরে পুলিশ সদস্য কিছু খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছেন অভুক্ত পাখিগুলোকে। যা খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে পাখিগুলো।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, শহরের বড় বাজারের শহীদ হাসান চত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের এক সার্জেন্টকে খাবারের জন্য ঘিরে ধরে পাখিগুলো।



পরে ওই পুলিশ সদস্য অভুক্ত পাখিগুলোকে খাবার খাওয়ান। করোনা পরিস্থিতির কারণেই পাখিরা খাদ্য সংকটে পড়েছে। এর আগে এমনটি দেখা যায়নি।
আগেও খাওয়ানো হতো জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আগেও খাওয়াতাম। ওখানে (শহীদ হাসান চত্বর) একটি পুলিশ বুথ আছে।
লকডাউনে গাড়ির চাপ কম, মানুষের আনা-গোনা নেই। তাই না খেয়ে আছে পাখিগুলো। আমি বলে দিয়েছি, এখন থেকে পাখিগুলো মাঝে মাঝেই খাবার দেয়া হবে।



প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে এসপি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিদিন ক্ষুধার্ত মানুষকেও খাওয়াচ্ছি। এই অবস্থায় অনেক মানুষ না খেয়ে থাকছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তাদের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি।
জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছি অনেকে না খেয়ে রয়েছেন। কিছুক্ষণ আগেও ফোন পেলাম ‘ন্যাংটা পীরের মাজারে’ একজন ভিখারি না খেয়ে মরণাপন্ন অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সদস্যরা সেখানে ছুটে গেছেন খাবার নিয়ে। দোয়া করবেন, এই জেলায় ২৯৮ জন করোনা আক্রান্ত, তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন- বলেন পুলিশ সুপার।