দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়…

1622

পৃথিবীর গঠনের মতোই আমাদের দেহের শারীরিক গঠন। আমাদের দেহের শতকরা ৬০ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত। দেহের সব জৈবিক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পানিপান অপরিহার্য, এবং তা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত।

পানি কেবল তৃষ্ণাই মেটায় না, শরীরে পানির ভারসাম্যও ঠিক রাখে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী কতটা পানি কোন কোন কাজে ব্যবহৃত হবে তার মাত্রাও ঠিক হয়।

মানুষের জীবনে পানির বিকল্প নেই। পানি কিডনির মাধ্যমে শরীরের সব ক্ষতিকারক উপাদান দূর করে দেয়। তবে পানি পান করার নিয়মও আছে।

চিকিৎসকদের মতে, দাঁড়িয়ে পানি পান করার চেয়ে বসে পানি পান করা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। শরীরের পেশি, হাড়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থান, সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পান করতে হবে পানি। রক্তচাপ, স্নায়বিক ক্রিয়াকলাপ, কিডনির কার্যকারিতা ইত্যাদি নানা দিক খতিয়ে দেখে, বসে পানি পানেরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

চলুন জেনে নিই দাঁড়িয়ে পানি পান করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে-

১. যখন দাঁড়িয়ে পানি পান করেন তখন পানি সরাসরি পাকস্থলিতে চলে যায়। তারপর খুব দ্রুতই প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এর মাধ্যমে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

২. দাঁড়িয়ে পানি পান করলে আপনার শরীরের জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।

৩. এই অভ্যাসটি শরীরের অক্সিজেন সরবরাহকে বাধা দেয়। এতে করে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে।

৪. দাঁড়িয়ে পানি খেলে নার্ভে প্রদাহ বেড়ে যায়। ফলে কোনো কারণ ছাড়াই দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে।

৫. বদহজমের সমস্যা হয়।

৬. এসিড লেভেলে তারতম্য ঘটে দাঁড়িয়ে পানি খেলে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পানি খেলে শরীরে ক্ষরণ হতে থাকা অ্যাসিডকে তরল করতে পারে না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

৭. এ অভ্যাসটির জন্য আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হতে সময় লাগে না।

করণীয়: দাঁড়িয়ে পানি খাওয়ার খারাপ দিককে অনেকে সেভাবে পাত্তা দেন না। কিন্তু এটি সার্বিক ক্ষতিই করে। রাস্তাঘাটে সব সময় বসে পানি খাওয়ার উপায় থাকে না। তাই সময় কেবল তেষ্টা মেটার মতোই পানি পান করুন। পরে বসে পানি পান করার সুযোগ এলে ভালোভাবে পান করুন।

পানি পানের নিয়ম: শরীর অনুযায়ী পানির প্রয়োজন বাড়ে-কমে। নিজের শরীরে কতটুকু পানি প্রয়োজন তা জেনে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে। এক জায়গায় বসে ছোট ছোট চুমুকে ধীরেসুস্থে পানি খান। পানি পান করার সময় কথা বলার চেষ্টা বা হাঁপাতে হাঁপাতে পানি পান করলে তা যেকোনো সময় শ্বাসনালীতে গিয়ে বড় বিপদ ঘটাতে পারে। তাই এড়িয়ে চলুন সেসব।

শীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেলের রয়েছে অনেক গুণ

রান্নায় সরিষার তেলের যেমন জুড়ি নেই, তেমনি ঠান্ডার চিকিৎসা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং ত্বক মসৃণ করতেও সরিষার তেলের রয়েছে নানা গুণ। যুগ যুগ ধরে গ্রাম বাংলায় নানি দাদিরা তার ভবিষ্যৎ বংশধরদের অত্যন্ত যত্ন সহকারে শরীরে সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করে দিতেন।

এটি যেন গ্রাম-বাংলার চিরপরিচিত একটি দৃশ্য। তবে সরিষার তেল শরীরের জন্য কী উপকারী? এই বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে মতামত তুলে ধরেছেন গবেষকরা।

সৌদি আরবের জিজান জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসক ও কমিউনিটি হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী সভাপতি ডাক্তার খন্দকার মো. আনোয়ারুল হক বলেন, সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেল শিশু ও বয়স্ক সবার ত্বকের জন্যই উপকারী। বিশেষ করে শীতকালে এই তেল ব্যবহারের ফলে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

অনেকে মনে করেন সরিষার তেল ত্বকের জন্য উপকারী নয়। এর একটি কারণ হতে পারে যে, অধিকাংশ গবেষণাই হয়েছে ইউরোপ আমেরিকাভিত্তিক। যেখানে সরিষার তেলের কোনও ব্যবহারই নেই।

সেসব দেশে এখনও সরিষার তেল ত্বকে ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়া হয় না। আবার আমাদের দেশে যেহেতু অনেক আগে থেকেই এই তেল সহজলভ্য তাই মনে করা হয়, হাতের কাছে ছিল বলেই তা ত্বকের জন্য ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়।

তিনি বলেন, সরিষার তেল ত্বকের যত্নে ও খাওয়ার জন্য উপকারী। কারণ সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে মনো-স্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এই তেলে ওমেগা থ্রি ও সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।

তাই রান্নায় এই তেল ব্যবহার হলে হার্ট ডিজিজ হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। শিশুদের রোদে বসিয়ে সরিষার তেল মাখালে তা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, যদি পর্যাপ্ত রোদ না থাকে তাহলে সরিষার তেল নয়, বাজারে প্রচলিত লোশন দিতে হবে। তবে শিশু বা বয়স্ক সবার জন্য সরিষার তেল মুখে দেয়া যাবে না।

সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিণ্ড–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।

ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, সরিষার তেলের ওষুধি গুণাগুণ প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেল যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও। সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই থাকে। এই তেল ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। তাই এটি ত্বকের ক্যানসারও প্রতিরোধ করতে পারে।

শীত কালে অনেকেরই পা ও ঠোঁট ফেটে যায়। সে ক্ষেত্রেও সরিষার তেল খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে বলে জানান এই চিকিৎসক। এ ছাড়া সরিষার তেলের সাথে রসুন গরম পায়ের নিচে লাগালে অনেক ঠান্ডা জনিত রোগ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।