
৩ দিন পর চুলা জ্বলে উঠল, আর তাতে এক মুঠো চালের খুদ। যা মায়ের রান্নার পর পেট ভরে খেলো সন্তান নূর আমিন (৭)। সারা দেশ অঘোষিত লকডাউনে যখন স্থবির, তখন ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে পাথর শ্রমিক আমিনা বেগমের পরিবার।
গত রোববার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার আব্দুল জলিলের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। জানা যায়, এক সাথে ১০টি পরিবার একত্রে ভাড়া আছে। এর সবাই শ্রমিক। কেউ পাথর শ্রমিক, কেউ হোটেল শ্রমিক।



খাবার রান্নার জন্য ১/২ জনের চুলা জ্বললেও খাবারের অভাবে অনেকের জ্বলছে না। এর ফাঁকে দেখা যায় আমিনাকে। গত কয়েকদিন যাবৎ ছেলেকে ভাত এনে দিতে না পারায় ছেলের জন্য অন্য মানুষের বাড়ি থেকে এক মুঠো চালের খুদ এনে রান্না করছে। আর তা খাওয়ার অপেক্ষায় রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে প্লেট হাতে ছেলে নুর আমিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নো’ভেল ক’রো’না ভাই’রাস (কো’ভিড-১৯) এর কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সকল ধরণের কর্মসংস্থান বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গত ১০-১৫ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে সকলেই। তবে অনেকেই স্থানীয় না হওয়ায় কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অনেকের।



পাথর শ্রমিক আমিনা বেগম বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভজনপুর এলাকায় বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সন্তান ও স্বামী আব্দুল খালেককে নিয়ে আছি। দীর্ঘদিন ধরে পাথর ক্রাশিং মেশিনে কাজ করছি। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, ক’রো’না ভাই’রাসের কারণে সব বন্ধ থাকায় কোন কাজ নেই। যে কয়েকটা টাকা ছিল কোন মত দিন চলেছে।
গত ৩ দিন ধরে টাকার অভাবে বাজার করতে পারছি না। আজ কোন মতে একজনের বাড়িতে কাজ করে অল্প কিছু চালের খুদ নিয়ে এসেছি। তা দিয়ে দুপুরের খাবার হয়েছে। কেউ আমাদের খোঁজ খবরও নিচ্ছে না।



একই কথা বলেন সাবিনা ও আকলিমা। তারা বলেন, আমরা সন্তানকে নিয়ে যে কত কষ্টে আছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। গত ১০ দিন ধরে ঠিক মত খাবার খেতে পারছি না। সন্তানদেরও ঠিক মত খাবার দিতে পারছি না, একদিন কোন মতে অল্প কিছু চাল যোগাড় করতে পারলেও ২দিনেই খাবার পাচ্ছি না। সরকারি অনুদান তো দূরে থাক, স্থানীয় বিত্তবানরাও আমাদের পাশে থাকছে না।
প্রতিবেশী সপিজ উদ্দীন বলেন, দোকান বন্ধ থাকায় আমরা খুব বড় সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছি। খাওয়ার মত কোন টাকা নেই। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুল হক জানান, আমরা দ্রুত তাদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হটলাইন চালু করা হয়েছে। যদি কোন দারিদ্র মানুষ বা অসহায় মানুষ খাদ্যের অভাবে থাকে। তবে দিন হোক বা রাত আমরা তা তাদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো।



পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সরকারি ভাবে পাওয়া সকল ত্রাণ সহায়তা আমরা আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দারিদ্রদের মাঝে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা করেছি। আশাকরি সকলের মাঝে এই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে যাবে।
করোনা ইউনিটে ভর্তির ২০ মিনিট পর বরিশালে এক রোগীর মৃ’ত্যু !
জ্বর, গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়া এক পুরুষ রোগীর মৃ’ত্যু হয়েছে। আজ (৬ এপ্রিল) সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। ৫ টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃ’ত্যু হয়েছে। ইউসুফ আলী বরিশাল নগরীর তালতলি এলাকা রাড়ী মহলের বাসিন্দা।



হাসপাতালের করোনা ইউনিট কন্ট্রোল রুম সূত্র জানান, তিনি গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে জরুরি বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হলে ৫টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃ’ত্যু হয়।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, করোনায় আ’ক্রা’ন্ত কি না তা জানতে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে।