
পৃথিবীর ভারসাম্য র”ক্ষায় আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড়। পবিত্র কোরআন মজীদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন।
অর্থ : তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশ মণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্ব প্রকার জ’ন্তু। আমি আকাশ থেকে পানি ব’র্ষ’ণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্ব প্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ রাজি। [সূরা লুকমান, আয়াত : ১০]



পৃথিবীর বিশেষ এক ভূমিবিন্যাস হল পাহাড়। বনায়ন, কাঠ সরবরাহ, নদী, হ্রদ, পানির ব্যবস্থা, পর্যটন, খনিজ সম্পদ প্রভৃতি বিভিন্ন দিক থেকে পাহাড় মানুষ সহ পৃথিবীর সকল সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ও উপকারী। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার।
অপর দিকে মঙ্গলের পর্বতচূড়া মাউন্ট অলিম্পাস সমগ্র সৌর জগতের মধ্যে উচ্চতম পর্বতচূড়া যার উচ্চতা ২১,১৭১ মিটার। পৃথিবীর ভূমির পাঁচ ভাগের এক ভাগ পাহাড় এবং পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ দেশেই পাহাড় আছে। পাহাড়ের অনেক সুবিধার সাথে সাথে তার কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।



অন্য যে কোনো স্থানের চেয়েই পাহাড়ী এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য উন্নততর প্রকৌশল বিদ্যা ও অর্থ খরচের প্রয়োজন হয়। এ কারণেই দক্ষিণ ইউরোপের পাহাড়ী রাষ্ট্র অ্যান্ডোরার কোনো বিমান বন্দর নেই। পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ার কারণে এখানে বিমানের রানওয়ে বা বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জায়গা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
পাশাপাশি পাহাড় পৃথিবীর সকলের জন্য অপর একটি উপকার করে। সূর্যের অতি বেগুনী র’শ্মি এবং অন্যান্য ক্ষ”তি’কর র”শ্মির অনেকটাই পৃথিবীতে পৌছে পৃথিবীর পাহাড়গুলো তে আ’ট’কে যায়। আমাদের ঘরের ছাদ যেমন আমাদের রোদ, বৃষ্টি, ঝ”ড় থেকে মুক্ত রাখে, তেমনি ভাবে পাহাড়গুলো পৃথিবীর ছাদ হিসেবে পৃথিবীকে বিভিন্ন ক্ষ”তি’কর র’শ্মি থেকে র”ক্ষা করে।



আজো দাঁড়িয়ে আছে নবীজীকে (সা.) ছায়াদানকারী মরুভূমির সেই গাছ
অবিশ্বস্য হলেও সত্যে। আজ থেকে ১৫০০ বছর পূর্বে যে গাছটির নিচে মহানবী (সা) বিশ্রাম নিয়েছিলেন জর্ডানের মূরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় সেই গাছটি আজো দাঁড়িয়ে আছে। ইংরেজিতে এ গাছকে বলা হয় The Blessed Tree.
জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ সর্বপ্রথম এই স্থানটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেন। পৃথিবীতে এত পুরনো কোনো গাছ এখনো বেঁচে আছে তা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও সত্যি।



মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশের কারণে জন্ম থেকেই গাছটি ছিল পাতাহীন শুকনো কিন্তু এক সময় আল্লাহর হুকুমে গাছটি সবুজ পাতায় ভরে উঠে এবং আজ পর্যন্ত গাছটি সবুজ শ্যামল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস্য এই গাছটি জর্ডানের মরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় দণ্ডায়মান। জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ সর্বপ্রথম এই স্থানটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেন।
৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বয়স তখন ১২ বছর, তিনি তার চাচা আবু তালিবের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে মক্কা থেকে তৎকালীন শাম বা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে তারা সিরিয়ার অদূরে জর্ডানে এসে উপস্থিত হন।



জর্ডানের সেই এলাকাটি ছিল শত শত মাইলব্যাপী বিস্তৃত উ”ত্ত’প্ত বালুকাময় এক মরুভূমি। মোহাম্মদ (সা.) এবং তার চাচা আবু তালিব মরুভূমি পাড়ি দেয়ার সময় ক্লা’ন্ত হয়ে পড়েন। তখন তারা একটু বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিলেন। কিন্তু আশপাশে তারা কোনো বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
চার দিকে যত দূর চোখ যায় কোনো বৃক্ষরাজির সন্ধান পাচ্ছিলেন না। কিন্তু দূরে একটি মৃ’তপ্রায় গাছ দেখতে পেলেন তারা। উ’ত্ত’প্ত মরুভূমির মাঝে গাছটি ছিল লতাপাতাহীন শীর্ণ ও মৃ’তপ্রায়। উপায় না পেয়ে তারা মরুভূমির উত্তাপে শীর্ণ পাতাহীন সেই গাছটির তলায় বিশ্রাম নিতে বসেন।



উল্লেখ্য, রাসূল মোহাম্মদ (সা.) যখন পথ চলতেন তখন আল্লাহর নির্দেশে মেঘমালা তাকে ছায়া দিত এবং বৃক্ষরাজি তার দিকে হেলে পড়ে ছায়া দিত।
মোহাম্মদ (সা.) তার চাচাকে নিয়ে যখন গাছের তলায় বসেছিলেন তখন তাদের ছায়া দিতে আল্লাহর নির্দেশে মৃ’তপ্রায় গাছটি সজীব হয়ে উঠে এবং গাছটির সমস্ত ডালপালা সবুজ পাতায় ভরে যায়। সেই গাছটিই বর্তমানে সাহাবি গাছ নামে পরিচিত।
এ ঘটনা দূরে দাঁড়িয়ে জারজিস ওরফে বুহাইরা নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রি সবকিছু দেখছিলেন। আবু তালিব মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে পাদ্রীর কাছে গেলে তিনি বলেন, আমি কোনো দিন এই গাছের নিচে কাউকে বসতে দেখিনি। পাদ্রী বলেন, গাছটিও ছিল পাতাহীন কিন্তু আজ গাছটি পাতায় পরিপূর্ণ।



এই ছেলেটির নাম কি? চাচা আবু তালিব উত্তর দিলেন মোহাম্মদ! পাদ্রী আবার জিজ্ঞাসা করলেন, বাবার নাম কি? আব্দুল্লাহ!, মাতার নাম? আমিনা! বালক মোহাম্মাদকে (সা.) দেখে এবং তার পরিচয় শুনে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকি রইল না যে, এই সেই বহু প্রতীক্ষিত শেষ নবী মোহাম্মদ।
চাচা আবু তালিবকে ডেকে পাদ্রী বললেন, তোমার সঙ্গে বসা বালকটি সারা জগতের সর্দার, সারা বিশ্বের নেতা এবং এই জগতের শেষ নবী। তিনি বলেন, আমি তার সম্পর্কে বাইবেলে পড়েছি এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি, এই বালকটিই শেষ নবী।



চাচা আবু তালিব ও মহানবী (সা.) যেই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই গাছটি ১৫০০ বছর আগ যে অবস্থায় ছিল আজো সেই অবস্থায় জর্ডানের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটি সবুজ লতা-পাতায় ভরা এবং সতেজ ও সবুজ।আশ্চর্যের বিষয় এই যে, গাছটি যেখানে অবস্থিত তেমন মরুদ্যানে কোনো গাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
গাছটির আশপাশের কয়েকশ’ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আর কোনো গাছ নেই। গাছটির চারিদিকে দিগন্ত জোড়া শুধুই মরুভূমি আর মরুভূমি। উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমির মাঝে গাছটি দাঁড়িয়ে থেকে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে।