পৃথিবী থেকে ১০টি জিনিস উঠে গেলেই সিঙ্গায় ফুঁ দেবেন হযরত ইসরাফিল (আ.)

4974

কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে? এ প্রশ্নের সঠিক জবাব শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনি ছাড়া কারো সুনির্দিষ্ট তারিখ বা জ্ঞান নেই।

হাদিসে জিবরিলে এসেছে- ‘একবার আগন্তুক সেজে জিবরিল আলাইহিস সালাম একবার বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈমান, ইসলাম ও ইহসান স’ম্পর্কে প্রশ্ন করেন;

আর বিশ্বনবি সেসব প্রশ্নের জবাব দেন, তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম সেসব উত্তরে ‘সত্য বলেছেন’ বলে সত্যয়ন করেন।

অতঃপর জিবিরল প্রশ্ন করেন, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনবি বলেন, ‘এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে অধিক কিছু জানেন না।’

তখন জিবরিল বললেন, তাহলে কেয়ামতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বলুন। তখন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- দাসি তার আপন মুনিবকে প্র’স’ব করবে।

তখন দেখা যাবে, খালি পায়ের উ’ল’ঙ্গ-কাঙ্গাল মেষ পালনকারীরা বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে গর্ব ও অহংকার করবে।

হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বিভিন্ন প্রয়োজন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ২৪ হাজার বার এসেছেন বলে জানা যায়।

একবার বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- হে জিবরিল! আমার ইন্তেকালের পর আপনি কতবার দুনিয়াতে আসবেন?

জিবরিল বললেন, ‘১০ বার আসবো এবং দুনিয়া থেকে ১০টি জিনিস তুলে নেব। আর ১০তম জিনিসটি তুলে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হজরত ইসরাফিল আলাইহিস সালাম সিঙ্গায় ফুঁ দেবেন এবং কেয়ামত শুরু হবে।

১০টি জিনিস হলো- বরকত তুলে নেয়া হবে। ইবাদতের স্বাদ বা মজা তুলে নেয়া হবে।পরস্পরিক মহব্বত তুলে নেয়া হবে। লজ্জা তুলে নেয়া হবে।

হক বা সঠিক বিচার তুলে নেয়া হবে। সবর বা ধৈর্য তুলে নেয়া হবে। আলেম’দের থেকে সত্য কথা তুলে নেয়া হবে। যারা হক কথা জানলেও তা বলবে না।

ধনীদের অন্তর থেকে সৎ সাহস উঠিয়ে নেয়া হবে। ঈ’মানদার ব্যক্তি থাকেবে না। ঈ’মান উঠে যাবে। ক্বারিদের অন্তর থেকে কুরআন তুলে নেয়া হবে।

যখনই দুনিয়া থেকে মানুষের ঈমান ও কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে তখনই কেয়ামত শুরু হবে। সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, উল্লেখিত ১০টি জিনিসের অনেকগুলোই আজ অনুপস্থিত।

কোথাও এগুলোর পরিপূর্ণ অস্তিত্ব নেই। আবার কিছু জিনিস একেবারেই উঠে গেছে।

আল্লাহ তাআলা মু’সলিম উম্মাহকে ঈমান ও কুরআনকে বুকে ধারণ করে সত্য পথে চলার তাওফিক দান করুন। পরিশেষে ঈমানের সঙ্গে মৃ”ত্যু লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

শিশুদের যেভাবে সহজে কুরআন শিক্ষা দিবেন

সচরাচর মুসলমানেরা তাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শুধু জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখান কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা,

দয়া এবং সমবেদনা অথবা জান্নাতের সৌন্দর্যের কথা সেভাবে তুলে ধরেন না। আমরা শিশুদেরকে ভয় যতটা জোর দিয়ে দেখাই যে তারা যদি আল্লাহর অমান্য করে,

মা-বাবার কথা নাশুনে, বা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের দোজখের আগুনে জ্বালানো হবে; ততটা তাদেরকে আশাবাদ দেই না যে তারা যদি সৎ কাজ করে, আল্লাহ ও মা-বাবাকে মান্য করে এবং কোনো ভালো কাজ করে তবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে।

আমরা সবসময় তাদেরকে ভয় দেখাই, জাহন্নামের হুমকি দেই অথচ খুব কমই তাদেরকে সাহস যোগাই অথবা ভালো আচরণের জন্য আল্লাহ’র ভালোবাসার কথা, পুরুষ্কারের কথা উল্লেখ করি।

এমন পরিবেশে, শিশুরা আ’ত’ঙ্ক’গ্র’স্ত ও ভীতু হিসাবে বেড়ে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। শিক্ষকরা সাধারণত কুরআনের শেষ অধ্যায় থেকে (ত্রিশ পারা) শিশুদের পড়ানো শুরু করে।

এই অধ্যায় ছোট ছোট সূরা সম্বলিত যেগুলো ওহী আসার প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় নাযিল হয়। মূলত কুরাইশ গোত্রের বিপথগামী, অহংকারী এবং অ”ত্যা”চা”রী পৌত্তলিক নেতাদের (আবু জেহেল, আবু লাহাব) উদ্দেশ্যে এই সূরা গুলো নাযিল হয়েছিলো।

তাছাড়া যারা মুসলমানদের অত্যাচার করছিলো, মুসলমানদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে হ”ত্যা করেছিলো, নবীজী (সাঃ)কে হ”ত্যা”র পরিকল্পনা করছিলো এবং বিশ্বাসীদের ধ্বং”স করতে যু”দ্ধ বাধিয়ে ছিলো-কুরআন নাযিলের সূচনার অধ্যায়গুলো মুলত তাদের উদ্দেশ্যেই।

এই সূরা গুলো এসব অ”ত্যা”চা”রী”দে”র তাদের হুশ/জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ছিলো। এদিকে আয়াতের দৃঢ় কথাগুলো তাদের কানে বজ্রধ্বনি হিসাবে কাজ করতো কারণ আয়াতগুলো ভ’য়া’ন’ক সতর্কবার্তা সম্বলিত ছিলো।

যেমন নিচের আয়াতগুলো- “আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বং’স হোক এবং ধ্বং’স হোক সে নিজে” (সূরা লাহাব, ১) “প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ” (সূরা হুমাজাহ, ১) “আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লা’ঞ্ছি’ত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত।

তারা জ্ব’ল’ন্ত আ’গু’নে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই” (সূরা গাসিয়া, ১-৬) “যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ (সূরা মুতাফফিফিন, ১) “বলুন, হে কাফেরকূল” (সূরা কাফিরুন, ১)

“যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে” (সূরা যিলযাল, ১) এটা খুবই দুঃখজনক যে এসব কঠিন বার্তা কোমলমতি শিশুদের উদ্দ্যেশে নাযিল না হলেও এগুলোই শিশুদের সর্বপ্রথম শিখানো হয়।

হ্যা, প্রথমেই এ সূরাগুলো শিখানোর একটা কারণ হচ্ছে এগুলো ছোট এবং সহজে মুখস্ত করা যায়।

তবুও শিশুদের এ বয়সে জাহান্নাম ও শা’স্তি’র ভ’য় দেখানোর বদলে আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা, মা-বাবার দয়া এবং জান্নাতের সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে বুঝানো।

এর ফলে শিশুকাল থেকে তাদের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি, ভালোবাসা, দয়া, কোমলতা, মহত্ত্ববোধ, উদারতা এবং সহানুভুতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে।

আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া, মমতা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং উদারতা ইত্যাদি আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীগুলোর শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুদের প্রথম পাঠ শুরু করা উচিত।

প্রথমে তাদের মনে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে তারা ভালো এবং আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। এরপর তাদেরকে শেখাতে হবে যে তাদেরও উচিত আল্লাহকে ভালবাসা।

শিক্ষার ক্রমটি এমন হতে হবে যে , প্রথমত তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের অবগত করা, তারপরে তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা শেখানো।

এরপর যখন সন্তান কিছুটা বড় হবে এবং বুঝতে শিখবে, তখন মা-বাবা ধীরে ধীরে তাদেরকে খারাপ কাজের জন্য জাহান্নামের শা’স্তি’র কথা বলতে শুরু করবেন।

যেসব সূরাগুলো বড় বড় গুনাহের জন্য শাস্তির আগাম সতর্ক বার্তা দেয়- সেসব সূরাগুলো এসময় শুরু করা উচিত, যাতে তারা এসব থেকে ভ’য়ে স’ন্ত্র’স্ত না হয়ে বরং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

এটা তাদের শৈশবের শেষ পর্যায় কিংবা টিনেজ (১৩-১৯) বয়সের দিকে হতে পারে যখন তারা কিছুটা বড় হয়েছে এবং কিছুটা জটিল বিষয়গুলো ও কর্মের ফলাফল বুঝতে সক্ষম।

কুরআনের শিক্ষা দেবার সময় আমদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা শিশুর দর্শন ও মানসিকতাকে কিভাবে তৈরি করছি।

এটা আবশ্যক যে, শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবা- মাকে সচেতনতার সাথে তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরা বা আয়াত নির্ধারণ করতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বেশির ভাগ সাহাবী তাদের প্রাপ্তবয়সে (শিশু বয়সে নয়) কুরআনের সাথে পরিচিত হন। তথ্যসূত্র অনলাইন থেকে সংগৃহীত।