
ইসলাম শান্তির ধর্ম। মহান রাব্বুল আল-আমিন আমাদের এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন ইসলাম ধর্মে আমল করে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করার জন্য। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াবি জীবনে যতবেশি ইবাদত করবেন, আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, মৃ”ত্যু”র পরের জীবনে সে ব্যক্তি তত সুখে থাকবেন। মৃ”ত্যু”র পরে আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাতের মতো পরম সুখের স্থানে রাখবেন।



প্রত্যেক জুমায় জান্নাতে বাজার বসবে তবে সে বাজার পৃথিবীর বাজারের মত নয়। জান্নাতের বাজারের নিয়ম-নীতি পৃথিবীর বাজারগুলোর চেয়ে ভিন্ন। সেখানের কোন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থাকবে না। সেখানে ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমায় জান্নাতি লোকেরা তাতে একত্রিত হবেন।
তারপর উত্তরদিকের মৃদুবায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং শরীরের রং আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তারপর তারা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে।



এসে দেখবে, পরিবারের লোকদের শরীরের রং এবং সৌন্দর্যও বহুগুণ বেড়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা তাদের বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ!
তোমাদের শরীরের সৌন্দর্যও তোমাদের নিকট থেকে আমরা যাবার পর বহুগুণে বেড়ে গেছে। (মুসলিম, হাদিস নং: ২৮৩৩, ১৮৮৯) আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে। সেখানে যখনই কোনো ব্যক্তির যে ধরনের মুখাবয়ব (ও প্রতিকৃতি) ধারণ করতে চাইবে, সঙ্গে সঙ্গে সে সেই আকৃতি ধারণ করতে পারবে। (মিশকাত, হাদিস নং: ৫৬৪৬, ১৯৮২; তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫৫০) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে।



তিনি একদিন আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আল্লাহুর কাছে দোয়া করি যেন তিনি আমাকে এবং তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। সাঈদ ইবুনল মুসাইয়াব তখন বললেন, জান্নাতে কি বাজারও থাকবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, রাসুল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর নিজ নিজ আমলের আধিক্য অনুসারে যথাযোগ্য বাসস্থান গ্রহণ করবে। পরে দুনিয়ার দিন হিসাবে প্রতি জুমাবার তারা তাদের মালিকের (আল্লাহ তাআলা) সাক্ষাতে আসবে। তাদের জন্য তার আরশ প্রকাশ করা হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রতিপালকের দর্শন পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, তেমনিভাবে তোমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাতেও কোনো অসুবিধা থাকবে না।



ওই মজলিসে এমন কোনো ব্যক্তি অবশিষ্ট থাকবে না, যার সঙ্গে আল্লাহ তা’আলার কথোপকথন না হবে। সেখান থেকে জান্নাতিরা জান্নাতের বাজারে আসবে। ফেরেশতারা তা ঘিরে রাখবেন। তাতে এমন সব জিনিস থাকবে, যা কোনো চোখ কখনও দেখেনি, কোনো কান কোনো দিন শোনেনি, কোনো হৃদয়ে তা কল্পনাও হয়নি। সেখানে কিছুর কেনাবেচা হবে না। এই বাজারেই জান্নাতিদের পরস্পর সাক্ষাৎ হবে। জান্নাতিরা নিজ নিজ আবাসে ফিরে আসার পর স্ত্রীরা এসে অভ্যর্থনা জানাবে।
বলবে, স্বাগতম ও শুভেচ্ছা। আমাদের নিকট থেকে যখন গিয়েছিলেন, তখনকার তুলনায় এখন আপনারা আরো বেশি সুন্দর হয়ে ফিরে এসেছেন। তখন জান্নাতি পুরুষরা বলবে, আমরা তো আজ মহাপরাক্রমশালী আমাদের প্রভুর মজলিসে বসে এসেছি। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫৪৯; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং: ৪৩৩৬)



জান্নাত দেখতে যেমন হবে, মুমিনরা যেভাবে দিন কাটাবে
সুরা হাদিদে বলা হয়েছে, হাশরের ময়দানে মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে। এক দল সুস্পষ্ট কাফির ও মুশরিক। এদের জাহান্নামের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে। দ্বিতীয় দল মুমিনদের। তাদের সঙ্গে থাকবে ঈমানের আলো।
আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘সেদিন (বিচারের দিন) আপনি দেখবেন মুমিন ও মুমিনাদের, তাদের সম্মুখভাগে ও ডান পাশে তাদের জ্যোতি ছোটাছুটি করবে। বলা হবে, আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা:হাদিদ, হাদিস:১২)



এখন জনমনে প্রশ্ন আসতে পারে, জান্নাত দেখতে কেমন? আজ আমরা সে সম্পর্কে ইসলামী শরীয়ত মতাবেক কিছু তথ্য দিব।
জান্নাত: জান্নাত অর্থ—বাগান, উদ্যান, ঢাকা, আচ্ছন্ন ইত্যাদি। জান্নাত বৃক্ষ তরুলতায় আবৃত হওয়ার কারণে একে জান্নাত বলা হয়। জান্নাত এমন শান্তির জায়গা, যার বর্ণনা দেওয়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। জান্নাতে রয়েছে এমন সুখ-শান্তি, যা কোনো হৃদয় কল্পনা করেনি এবং কোনো চোখ দেখেনি। জান্নাতে থাকবে উন্নত মানের আসন।
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতিদের তাদের ধৈর্যের প্রতিদানস্বরূপ প্রাসাদ দেওয়া হবে। তাদের সেখানে অভিবাদন ও সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে। তথায় তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতই না উত্তম।’



(সুরা:ফুরকান, আয়াত:৭৫-৭৬) অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে বহু প্রাসাদ, যার ওপর নির্মিত থাকবে আরো প্রাসাদ তথা বহুতলবিশিষ্ট, যার পদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা:জুমার, আয়াত:২০)
মহানবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতে মুমিনদের জন্য একটি মুক্তার তৈরি বিরাট গম্বুজ থাকবে, যার ভেতরের অংশ ফাঁকা থাকবে। ওই গম্বুজটির দৈর্ঘ্য ৬০ মাইল লম্বা হবে। তার প্রতিটি কোণে মুমিনদের সংশ্লিষ্ট স্ত্রী ও খাদেমরা থাকবে। কোনোটির দূরত্ব এত বেশি হবে যে এক কোণের লোক অন্য কোণের লোকদের দেখতে পাবে না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম) প্রস্থের দূরত্ব হবে জাবিয়াহ (একটি জায়গার নাম) থেকে সানআর (একটি জায়গার নাম) দূরত্বের সমতুল্য (তিরমিজি)।



মহানবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতে চাবুক রাখার পরিমাণ সামান্য জায়গা দুনিয়া ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) জান্নাতের সুঘ্রাণ ৫০০ মাইল দূর থেকে পাওয়া যাবে। জান্নাতিরা নানা ধরনের ফলফলাদি ভক্ষণ করবে। তারা হবে ৬০ হাত লম্বা এবং ১৪ তারিখের চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তাদের উন্নত মানের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে জান্নাতিদের জন্য ফলমূল ও কাঙ্ক্ষিত সব কিছু থাকবে।’
(সুরা:ইয়াসিন) আরো ইরশাদ করেন, ‘তারা জান্নাতে হেলান দিয়ে বলতে থাকবে—তথা তারা প্রচুর ফলমূল ও পানীয় বস্তু আনতে বলবে।’ (সুরা : সাআদ) আরো ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে আছে দুধের নদী, যার স্বাদ অপরিবর্তনীয় ও পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নদী এবং পরিশোধিত মধুর নদী ও তথায় থাকবে বিভিন্ন ফলমূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা।’ (সুরা : মুহাম্মদ) এই লেখাটি ‘মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম’ ভাইয়ের প্রফাইল থেকে পাওয়া।