
সন্তানের সফলতার জন্য পৃথিবীর বুকে আমাদের এক মাত্র নি’রা’পদ আশ্রয়স্থল ”মা”। যত আবদার যত অ’ভি’যো’গ সবই মায়ের কাছে। নাড়ী ছেড়া ধন সন্তানের জন্য দশ মাস দশ দিন শুধু নয়, মায়ের সারা টা জীবন উৎস্বর্গ করেও যেন মায়ের তৃপ্তি নেই।



কিন্তু সেই মায়ের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি আমরা ? বৃদ্ধাশ্রম তো একটা সু-সন্তানের মায়ের জায়গা হতে পারে না..! মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য কত বড় আর্শীবাদ তা আমরা অনেকেই হয়ত ভাবি না। মায়ের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দোয়া অর্জন করে একটা সন্তান তার জীবনটা বদলে নিতে পারে।
তেমন কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করব আপনাদের সাথে ধারাবহিক ভাবে। আব্দুলাহ মাহতাব। এক জন সফল ব্যবসায়ী। যার ব্যবসার শুরুটা হয় সতের বছর বয়সে। খুব ছোট বেলাতেই তার বাবা মা”রা যান। যখন তার মায়ের বয়স মাত্র বাইশ।



সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সমস্ত সুখ বি’স’র্জ’ন দিয়েছেন এই মা। ছোট বেলা থেকেই বাবার আদর-স্নেহ থেকে ব’ঞ্চি’ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু মা কখনও সে অভাব বুঝতে দেন নি। একটা মানুষ দিনের পর দিন আগলে রেখেছেন পরম মমতায়। দিয়েছেন সততার শিক্ষা।
গড়ে তুলেছেন মানুষের মত মানুষ হিসেবে। মায়ের সাথে জড়ানো তার হাজারো সৃতি। মায়ের সাথে ছোট বেলার সৃতির কথা জানতে চাইলাম। মুহুর্তেই অশ্রসিক্ত চোখে আব্দুল্লাহ মাহতাব বলছিলেন, যে বয়সে ঘুম পাড়ানির গল্প বলে ঘুম পাড়ায় আমাদের মায়েরা, সে বয়সে তার মা তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন ইসলামের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার গল্প বলে।



যেখানে ঈশা (আঃ), ইসমাইল (আঃ) নুহ (আঃ) মুসা (আঃ) প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নানা ঘটনার গল্প থাকত। সততা আর সহসীকতার পুরস্কার কি হতে পারে ঠিক তখন থেকেই মনে দাগ কে”টে যায় তার। সৎ পথে আল্লাহর সাহায্য থাকে এটা তার মা তাকে খুব ভাল ভাবেই শিক্ষা দিয়েছিলেন।
মায়ের ইচ্ছে ছিল না কখনো তার ছেলে চাকুরী করবে। তার মা প্রায়ই বলতেন আমার ছেলে বড়জোড় একটা পিয়নের চাকুরী পাবে। কিন্তু তা দিয়ে নিজে চলতে পারলেও অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে পারবে না। তাই ইচ্ছে ছেলে ব্যবসায়ী হোক।



আব্দুল্লাহ মাহতাবকে এক দিন ডেকে বললেন তুমি কি করতে চাও চাকুরী নাকি ব্যবসা? যখন তার বয়স মাত্র সতের। ব্যবসার পুঁজি বলতে মায়ের জমি বিক্রি করে সমস্ত অর্থ তুলে দিলেন ছেলের হাতে। সবার কথা ছিল একটাই, ছেলেটা এবার সমস্ত সম্বল ন’ষ্ট করে ফিরবে। মায়ের আস্থা ছিল, দোয়া ছিল।
ব্যবসার জন্য হাতে টাকা তুলে দেওয়ার সময় মা শুধু একটা উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন ”বাবা সততার সাথে ব্যবসা করবে”। অক্ষরে অক্ষরে আজ পর্যন্ত পালন করে যাচ্ছেন মায়ের দেওয়া সেই উপদেশ। মায়ের দোয়া নিয়ে ক্রমে ক্রমে উঠে এসেছেন ব্যবসায় সফলতার শীর্ষে।



মায়ের অ’সু’স্থ্য’তার সময়ে সকল কাজ ফেলে মায়ের পাশে থেকেছেন। সমস্ত পৃথিবীকে এক পাশে রেখে মাকে রেখেছেন অন্য পাশে। এক দিন মা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যা”থা পান। সে দিনের রাতের সৃতি তার জীবনের সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। মায়ের পাশে থাকার জন্য অনুমতি চান।
কিন্তু স্ত্রী-সন্তান অন্য রুমে থাকলে রাতে ভ’য় পেতে পারে বলে মা বললেন, বাবা স’ম’স্যা নেই। ওরা ভ’য় পাবে। তুমি তাদের পাশে থাক। তার স্ত্রীও থাকতে চাইলেন মায়ের পাশে। তাকেও নিষেধ করে তার সন্তানদের কাছে থাকতে বললেন। কিন্তু মায়ের কথা উপেক্ষা করে আব্দুল্লাহ মাহতাব থাকতে চাইলেন তার পাশে।



শেষ পর্যন্ত মায়ের কথাতে দুই রুমের মাঝের রুমটাতে থাকার অনুমতি মিলল। অ’সু’স্থ্য মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলে কিছুই জানে না। অচেতন বিভোর ঘুমে। রাত তিনটার দিকে ঘুম ভাঙতেই দেখেন মা নাড়া-চাড়া করে ঘুম ভা’ঙ’ছে। ছেলে অপলক তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।
মা বললেন তুমি ঘুমাওনি বাবা। ছেলের সরল উত্তর মা আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার জীবনে আমি কোন দিন এত প্রশান্তির ঘুম ঘুমাইনি। আজ জানি না কেমন ঘুমে আমাকে ধরল। আমি কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম আমি বলতে পারব না মা। সে দিনের মত আর কোন দিন এত প্রশান্তির ঘুম ঘুমাতে পারিনি।