
দোয়া কবুল হতে আল্লাহ কোন কঠিন কিছুই করতে বলেন নি। মহান আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, দয়ালু। তাঁর কাছে মন থেকে তওবা করে ক্ষমা চাইলে তিনি নিশ্চয় তা মাফ করে দেন। তাই বছরের শ্রেষ্ঠ মাস পবিত্র রমজানে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ঠি অর্জনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দিগীর মধ্যে দিয়ে কাটায়।
আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। অন্যত্র বলেছেন, যখন কোনো বান্দা আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি।



রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়ার চেয়ে মূল্যবান বস্তু কিছুই নেই (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। রমজান দোয়া কবুলেরও মাস। রসুল (সা.) বলেন, ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (ইবনে মাজাহ)।
অন্যত্র বলেছেন, দোয়া সব ইবাদতের মূল (তিরিমিজি)। তবে দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হলো বৈধ উপার্জন ও খাদ্য। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আকাশের দিকে দুহাত তুলে ‘হে আল্লাহ, হে আল্লাহ’ বলে দোয়া করে অথচ তার খাবার, পানীয়, পোশাক অবৈধ এবং তার র”ক্ত-মাং”স সৃষ্টি হারাম উপার্জনে, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে (মুসলিম)?



আল্লাহতায়ালও তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষের দোয়া কবুল করার জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ খোঁজেন। সেজন্য দিন রাতের কিছু মুহূর্ত ঠিক করে রেখেছেন যখন দোয়া কবুল হয়।
আজান ও ইকামতের সময়
হজরত আনাস রাজিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ –সুনানে তিরমিজি: ১৯৬
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে
প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া কবুল হয়। সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, ‘প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ সবচেয়ে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছ, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছ, আমি তাকে তা দেবো। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো।’ –সহিহ মুসলিম: ১২৬৩



শেষ রাতে
সাহাবি হজরত জাবের রাজিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘শেষ রাতের যেকোনো সময় কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে পৃথিবী বা পরকালের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে।’ –সহিহ মুসলিম: ১২৫৯
সেজদার সময়
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থায় থাকে তা হলো সেজদার সময়। তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশি চাও।’ –সহিহ মুসলিম: ৭৪৪



ফরজ নামাজের পর
সাহাবি হজরত আবু উমামা রাজিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে।’ –সুনানে তিরমিজি: ৩৪২১
বৃষ্টি ও আজানের সময়
হজরত রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া ও বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া।’ সুনানে আবু দাউদ: ২১৭৮



পূর্ণ মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মুনাজাতের আহ্বান জানিয়েছেন নবীজী (সা.)। ঘোষণা করেছেন, উদাসীন ও অমনোযোগীদের দোয়া কবুল করা হয় না এবং রোজাদার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। (তিরমিজী)
বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানি (রহ.) রচনাবলিতে উল্লেখ রয়েছে, হে মহান অতিথি রোজা, তোমাকে সালাম। তুমি তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও কোরআন তেলাওয়াতের মাস, তুমি পাপমুক্তি ও কল্যাণ অর্জনের মাস।



তুমি দোয়া কবুলের মাস। তোমাকে সালাম, শুভেচ্ছা। তুমি দোয়া মুনাজাতের উপযুক্ত সময়। রোজা, তুমি এমন নও যে, তোমাকে বিদায় দেওয়া যায়। কিন্তু তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছো, এই বিরহ-বেদনায় আমরা কাতর। আগামী বছর তোমার অপেক্ষায় থাকলাম।
মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনই মুমিনের লক্ষ্য
একজন আশেকের মূল লক্ষ্য থাকে তার মাশুকের মন জয় করা। স্বভাবগতভাবেই মানুষ তার প্রিয় ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ জেনে সে অনুযায়ী তার মন জয় করার চেষ্টা করে।



প্রতিটি মুমিনেরও লক্ষ্য তার মাশুক মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করা। একজন মুমিনের সার্থকতা তার প্রভুর সন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় ইবাদতগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন কিছু আমল সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সময়মতো নামাজ আদায় করা
একদিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর নিকট কোন কাজ সব থেকে অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা। ঈমানের পর ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি হলো নামাজ। নামাজের ক্ষেত্রে অবহেলার কোনো অবকাশ নেই; বরং সময়মতো নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে যারা মসজিদে অপেক্ষায় থাকে, তাদের জন্য নামাজের সওয়াবই লেখা হয়।



আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের জন্য বসে অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজরত থাকে।
আর ফেরেশতারাও ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকে যে হে আল্লাহ, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি তাকে রহম করো। (আর ফেরেশতারা) ততক্ষণ পর্যন্ত এরূপ দোয়া করতে থাকে, যতক্ষণ সে সেখান থেকে উঠে চলে না যায় কিংবা যতক্ষণ অজু নষ্ট না করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৯৫)



মাতা-পিতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাতা-পিতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের মাতা-পিতার সহিত সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুরা ইসরার ২৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ করবে।
তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বোলো।