
যে কারণে মানুষের নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়- ইবাদত-বন্দেগি লোক দেখানোর জন্য নয়। মানুষের প্রতিটি ভালো কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ নিয়তের বিকল্প নেই। কেননা কাউকে বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করা যে কোনো ভালো কাজই সাওয়াবের পরিবর্তে গোনাহে রূপ নেয়।
সকল মানুষ জীবনের প্রতিটি কাজই শুধুই মহান আল্লাহর তা-আলার সন্তুষ্টির জন্য করবে। তবেই এই দুনিয়া ও মৃত্যুর পর পরকালে এ ভালো কাজের সফলতা পাবে মানুষ।



যে সকল মুসলিমরা অন্য মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করবে, তাতে সে গোনাহগার হবে এবং তার সব আমল বরবাদ ও নষ্ট হয়ে যাবে। এসব ইবাদতকারী মানুষ আল্লাহর কাছে প্র’তারক হিসেবে চিহ্নিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা ছালাত আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নেসা : আয়াত ১৪২)
ইবাদত হবে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর জন্য। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর খুশি ছাড়া যারা নিজের কাজের প্রচার চায়। লোক মুখে তাদের কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার আশা করে, তারা কখনো প্রকৃত ইবাদতকারী নয়। এ রকম আশা পোষনকারীদের ব্যাপারে হাদিসে কঠোর হু’শিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রিয় রাসূল (সঃ)।



হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (রোজ কেয়ামতের দিন) শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (রোজ কেয়ামতের দিন) দেখিয়ে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এই দুনিয়াতে সুখে অথবা দুঃখে থাকা অবস্থায় যে সব লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া নিজেদের প্রচার ও সুনামের জন্য কাজ করবে কেয়ামতের দিন অগণিত অসংখ্য মানুষের সামনে তারা হবে অপমানিত এবং তারা পাবে ক’ঠোর শাস্তি।



আবার কিছু মানুষ এমন থাকবে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিও চাইবে এবং নিজেদের সুনামও চাইবে। তাদের ভালো কাজও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাদের আমলও বরবাদ হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) হতে সব অংশীদারের তুলনায় বেশী মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সাথে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়টিকেই বর্জন করি।’ নাউজুবিল্লাহ। (মুসলিম)



উল্লেখিত হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্ট যে, যে কোনো ভালো কাজের কল্যাণ লাভ করতে হলে সেটি শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিজের সুনাম দুটি এক সঙ্গে হবে না। আর তা মহান আল্লাহও পছন্দ করেন না। ফলে এ আমলও বরবাদ হয়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে– সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর জন্য একান্ত নিয়তে ভালো কাজ করলে সে কাজের সুনাম আশা করার প্রয়োজন নেই। এমনিতেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সুনাম ও খ্যাতি চলে আসে। সে কারণে দুনিয়াতে নিজের নাম খ্যাতি সুনামের আশা করে কষ্টের আমল গুলো বরবাদ করা ঠিক নয়।



আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো ভালো আমল শুরু করার পর যদি কোনো মানুষের মনে লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয়ে যায়। ভাব জাগ্রত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি ওই তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং এ ভাব থেকে সরে শুধু আল্লাহর খুশির জন্য আমল অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে তবে তার ওই আমল শুদ্ধ হবে। সে আমলও আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।
দুনিয়ার যাবতীয় কাজ গুলোই হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তবেই মানুষের দুনিয়ার জীবন হবে শান্তি ও সুনামের। আর পরকাল হবে সুখময় সফল।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ‘রিয়া’ তথা মানুষকে দেখানো আমল থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত-বন্দেগি তথা নেক ভালো আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন- ছুম্মা আমীন।