
আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত খাদ্য সজিনা পাতা। আমরা অনেকেই সজনে সবজি হিসেবে খাই। গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera। ইংরেজিতে গাছটিকে বলে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ।
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। তাই সজিনা পাতাকে বলা হয় পুষ্টিগুণে ভরপুর সুপার ফুড এবং সজিনা গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বাংলাদেশের মানুষ ইহাকে বলে গরীবের শাক অথবা ফকিরের শাক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।



আমরা অনেকেই জানি না যে সজনের সাথে সাথে সজনে পাতাও খাওয়া যায়। সজনে গাছের পাতা এবং ফল উভয়ের মধ্যেই বিপুল পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবন ধারনের জন্য পুষ্টি উপাদান দুটোই পাওয়া যায়। এই জন্য অনেকেই বলে থাকেন সজিনা গাছ যাদের বাড়ীতে আছে তাদের বাড়ীতে ভিটামিনের ফ্যাক্টরি আছে।



এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি ভিটামিন A, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে।
চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়।



সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।
এতক্ষণ যে বিস্ময়গাছটির গুণগান করা হলো তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, কিন্তু সারা বিশ্বই আজ এই গাছ নিয়ে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারদিকে। এই বিস্ময়বৃক্ষটি আমাদের সবার পরিচিত সজিনা বা সজনে গাছ।



আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনার ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাই জানি না। তেল-রসুন দিয়ে রান্না সজিনে খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও। সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও অন্ত্রের পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে।
বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল র’ক্তনালীতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।



এই সজিনা পাতা চায়ের সাথে মিশিয়ে পানির সাথে গরম করে ফুটিয়ে পান করতে পারেন । সজিনা পাতার ভর্তা তৈরি করে খেতে পারেন ।
পাট শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণে ভরা পাটশাক অনেকের কাছেই প্রিয় একটি খাবার। পাটশাক খেতে যেমন সুস্বাদু আর তেমনই সহজলভ্য। সাধারণত পাটশাক ভেজে নিয়ে গরম ভাতের সাথে খাওয়া হয়। এটি শাক হিসেবে শুধু মুখরোচকই নয় পাটের পাতায় রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।



পাট শাকে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন সি, ই, কে, বি- ৬ এবং নিয়াসিন রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাটশাকে ক্যালরি থাকে ৭৩। এতে আমিষ থাকে ৩.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ)।
তাছাড়া পাট শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিন এবং খাদ্যআঁশ। এসব পুষ্টি উপাদান রোগবালাই থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে। সম্মানিত পাঠক দেখে নিন এবার পাট শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।



মুখের রুচি বাড়ায়- তেতো স্বাদের পাটশাক খাওয়ার রুচি বাড়ায়। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে ও মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়। পাটশাকের তেতো স্বাদ মুখে লালা ক্ষরণ করে শ্বেতসারকে ভাঙতে সাহায্য করে। এতে হজমের সুবিধা হয় ফলে খাবারের রুচি বাড়ে।
নিদ্রাহীনতা দূর করে- পাটশাকে থাকা ম্যাগনেশিয়াম উপাদান শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করে যা স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে এবং নিরবচ্ছিন্ন নিদ্রা নিশ্চিত করে। তাই ভাল ঘুমের জন্য পাট শাক খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- পাট শাকের ভিটামিন এ, ই এবং সি শরীরের রোগ পতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ভিটামিন-সি রক্তের শ্বেত কনিকা বৃদ্ধি করে এবং ভিটামিন-এ, ভিটামিন ই চোখ, হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।



হাড়ের বৃদ্ধি সাধন করে- পাটশাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে যা হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। তাছাড়া এতে থাকা আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হাড় গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে এবং হাড়ভঙ্গুরতা রোধ করে।
উচ্চ র’ক্ত’চাপ দূর করে- পাটশাকে বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম র’ক্ত’সঞ্চালন ও র’ক্ত’চাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে উচ্চ র’ক্ত’চাপ জনিত সমস্যা দূর হয়। এছাড়া পাটশাক র’ক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাক এবং ষ্ট্রোকের ঝুঁ’কি কমে যায়।
আয়রণের ভাল উৎস- পাটশাকে প্রচুর পরিমান আয়রন থাকে যা র’ক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে। পাটশাকে থাকা আয়রন দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে।



হজম শক্তি বড়ায়- পাটশাকে থাকা খাদ্যআঁশ হজম প্রক্রিয়াকে দারুণভাবে ত্বরান্বিত করে আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
বাতের ব্যথা দূর করে- পাট শাকে প্রচুর ভিটামিন ই থাকে। ভিটামিন-ই গেঁটেবাত, আর্থরাইটস এবং প্রদাহ জনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এই সকল রোগের জন্য পাট শাক একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য।
তাছাড়া পাটশাকে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে যেকোনো ধরণের ক্যানসার রোধে সহায়তা করে। এতে বিদ্যমান ফলিক অ্যাসিড ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ডায়াবেটিক ও র’ক্ত’চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক চাপ দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।