যে দোয়া পাঠ করলে দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে

2124

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে- যে দোআটি আমল করার দ্বারা সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।

আবু উমামা বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন। [আবু দাউদ-১৫৫৭ হায়াতুস সাহাবা-৭২৪]

ফজিলত: হজরত আবু সাঈদ খুদরি [রা.] বলেন; একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রাসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে? আবু উমামা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ!

অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তায়ালা তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন।

তিনি বলেন, জি হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।

আবু উমামা বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন। [আবু দাউদ-১৫৫৭ হায়াতুস সাহাবা-৭২৪] আরবি দোয়া (একবার পাঠ করতে হবে)

اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ.

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজাঝি ওয়াল কাসালি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবুনি ওয়াল বুখুলি ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিত দিনি ওয়া কাহরির রিজালি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাবতীয় চিন্তা ও পেরেশানি থেকে। তোমার আশ্রয় প্রার্থণা করছি সবধরণের অক্ষমতা ও অলসতা থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা ও কৃপনতা থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি অত্যাধিক ঋণ ও মানুষের ক্রোধ থেকে।

যে ঘটনাটি বদলে দিয়েছিল ইমাম গাজ্জালী (রহ.)-এর জীবন

মরুভূমির মাঝ দিয়ে উটের কাফেলা চলেছে মালপত্র আর যাত্রীসমেত জুরজান হতে তূসের পানে। হঠাৎ হা..রে..রে..রে করে কাফেলায় আ’ক্র’ম’ণ চালালো মরুচারী দু’র্ধ’র্ষ ডা’কা’ত’দ’ল।

চোখের নিমিষে যাত্রীদের সর্বস্বান্ত করে দিয়ে তাদের মালপত্রসহ ভারবাহী পশুগুলো লু’ন্ঠ’ন করে নিয়ে গেল ডাকাতেরা। এসময় হতাশ হয়ে নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে যেতে দেখা যাত্রীদের মধ্য থেকে এক অল্পবয়সী কিশোর ছুটে গেল কাফেলা লু’ন্ঠ’ন করে চলে যেতে থাকা ডাকাতদলের দিকে।

পেছন ফিরে ডাকাতসর্দার সেই ছেলেটিকে দৌড়ে আসতে দেখে হাতের অ”স্ত্র উঁচিয়ে বললো, ‘দাঁড়াও! আর এক কদম সামনে এগোলে জানে মে”রে ফেলবো!’ ছেলেটি সে জায়গাতেই দাঁড়িয়ে বললো, ‘আল্লাহর দোহাই লাগে! আমার তালীকাতগুলো ফেরত দিন।’ ডাকাতসর্দার জিজ্ঞাসা করলো, ‘এটা কি জিনিস?’

সে বললো, ‘ওগুলো আমার থলেতেই আছে। আমার বই সেগুলো, আমার শিক্ষকদের কাছ থেকে লেকচার শুনে শুনে লিখে রাখা নোট। আমি দুই বছর ধরে শুধু এই কারণেই বিদেশ-বিভুঁইয়ে কষ্ট স্বীকার করে থেকেছি।’

ডাকাতসর্দার এ কথা শুনে হো-হো করে হেসে উঠলো। সে বিদ্রুপ করে বললো, ‘আরে! তুমিতো দেখি বিশাল বিদ্যার জাহাজ! এগুলো তোমার বিদ্যা? এ কোনধরণের বিদ্যা যেটা আমার মতো একজন ন’গ’ণ্য-নি’কৃ’ষ্ট ব্যক্তি চাইলেই চু’রি করে নিয়ে যেতে পারে?

তার মানে এগুলো না থাকলে তোমার বিদ্যার ভাঁড় শূন্য? এই সামান্য কাগজগুলোর মধ্যেই যদি তোমার বিদ্যা সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে তোমার আর একজন মূ’র্খে’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়? যাও যাও! নিয়ে যাও তোমার বিদ্যার থলে।’

দস্যু সর্দারের কথায় ছেলেটি যারপরনাই ল’জ্জি’ত ও অ’নু’ত’প্ত হলো। সে বাড়ি ফিরে নোটসমূহ মুখস্থ করতে বসে যায়।

দীর্ঘ তিন বছর একাদিক্রমে অ’ক্লা’ন্ত পরিশ্রম করে সে ওইগুলো সম্পূর্ণরূপে ঠোঁটস্থ-মুখস্থ-কন্ঠস্থ করে ফেলে। এরপরে তার জ্ঞানের পিপাসা আরো বেড়ে যায়। জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে সে আবার গৃহ ত্যাগ করে। একসময় তার জ্ঞানের পরিধি এতো বিস্তৃতি লাভ করে যে আজ পর্যন্ত লোকে তাকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে থাকে। জ্ঞানপিপাসু এই মানুষটির নাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.)।

তৎকালীন খোরাসান প্রদেশের তূস জেলার তাহেরান শহরে হিজরী ৪৫০ সন মোতাবেক ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয়া এই ক্ষণজন্মা মহান দার্শনিক আলেমের প্রকৃত নাম ছিল মুহম্মদ। তবে তিনি হুজ্জাতুল ইসলাম উপাধি এবং ইমাম গাজ্জালী নামেই সকলের নিকট সুপরিচিত। ‘গাজ্জাল’ শব্দের অর্থ সুতা বিক্রেতা। তাই তার পারিবারিক উপাধি ছিল ‘গাজ্জালী’।

ইমাম গাজ্জারির পিতা বিশেষ কোনো কারণবশত: শিক্ষার আলো হতে বঞ্চিত ছিলেন। এই জন্য তিনি সারাজীবন অনুতাপও করেছেন। মৃ”ত্যু”কা”ল ঘনিয়ে আসলে তিনি তার কোনো এক সুফী বন্ধুর হাতে ইমাম গাজ্জালী ও তার ছোট ভাইকে (তিনিও আরেক বিখ্যাত সুফী আহমদ গাজ্জালী) তুলে দিয়ে বললেন,

‘বন্ধু! আমি জীবনে লেখাপড়া শিখতে পারিনি। তাই আমার একান্ত ইচ্ছা আমার ছেলে দুইটি যেন লেখাপড়া শিখে আমার সেই অপরাধের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করে। তুমি তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেবে।’

পিতার মৃ”ত্যু”র পর ইমাম গাজ্জালী ও তার ছোট ভাই তাদের পিতৃবন্ধু সেই বুযর্গের তত্ত্বাবধানে থেকে লেখাপড়া শিখতে থাকেন।

প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর তিনি তাদের তাহেরান শহরেরই একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। ইমাম গাজ্জালী সেখানে আহমদ ইবনে মুহম্মদ রাজকানীর নিকট ফেকাহ শাস্ত্রের প্রাথমিক কিতাবসমূহ সমাপ্ত করেন। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য জুরজান শহরে যান এবং সেখানে আবু নসর ইসমাঈলীর নিকট শিক্ষা আরম্ভ করেন।

তৎকালিন শিক্ষালাভের নিয়ম ছিল- শিক্ষক যে বিষয়ে শিক্ষা দিতেন ছাত্ররা সেটি সাথে সাথে লিখে নিতো। এজাতীয় নোটকে তালীকাত বলা হতো। এই তালীকাত নিয়ে ফেরার পথেই তরুণ ইমাম গাজ্জালী দ’স্যু’দ’লে’র খপ্পরে পড়েন।

ইমাম গাজ্জালী পরবর্তীতে বলেছিলেন, ‘আমার সেসময় মনে হয়েছিল স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন সেই ডা’কা’ত’সর্দারের মুখ দিয়ে আমাকে উপদেশ দেয়াচ্ছেন যে, আমি আসলেই এখনো গ্রন্থগত জ্ঞানকে আত্মস্থ করতে পারিনি।’

ওই একটি ঘটনা ইমাম গাজ্জালীর জীবনকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল। তিনি সেই তালীকাতগুলো মুখস্থ করেই থেকে থাকেননি। তার যুগের যতো ধর্মীয়, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল সবকিছুই তিনি তার অসাধারণ মেধার বলে আত্মস্থ করেন।

এসকল বিষয়ে প্রথাগত বিদ্যার যাবতীয় পাঠ যখন সমাপ্ত করেন তখন তার বয়স মাত্র ২৭ বছর। এই বয়সেই ভাষাবিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যার ওপরে তার এতোটাই দখল তৈরি হয় যে তিনি এককথায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।

তার বক্তব্যের মাধুর্য ও প্রাঞ্জলতা লোকজনকে ম’ন্ত্র’মু’গ্ধে’র মতো বসে থেকে তার কথা শুনতে বাধ্য করতো।

অথচ শুধুমাত্র এক ডা’কা’ত’স’র্দা’রে’র সহাস্য বি’দ্রু’প’ই তাকে তূস জেলার এক পিতৃহীন কিশোর থেকে পরবর্তীতে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.) হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।

তাই আজ, এই হাজার বছর পরেও ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তার চিন্তা ও কাজের দরুণ মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।