
মাহে রমজানে সুস্থতা- পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে চলে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। রামাদানের সময় – শব্দটি আরবী মূল শব্দ রামিদা বা আর-রামাদ থেকে এসেছে, যার মানে খুব গরম, দাহক তাপ বা শুষ্কতা কে বোঝায়। এই মাসে বিগত বছরের চিরাচরিত অভ্যাসগুলো পাল্টে যায়।



এ সময় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে খাদ্যাভ্যাসে। এ পরিবর্তন মানিয়ে নেওয়া প্রথম দিকে একটু কঠিন হয়ে যায়। তাই শরীরের উপর প্রভাব পড়ে। যার ফলে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে রোজাদাররা যেন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বজায় রাখেন । রমজান মাসে সঠিকভাবে রোজা পালন করার জন্য প্রয়োজন সুস্থ শরীর। আর তাই, নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের রুটিন।
এছাড়াও রমজানে সুস্থতা বজায় রাখতে প্রয়োজন রুটিন মেনে চলার একনিষ্ঠতা। আপনাদের রমজানের রোজা সুস্থ-সবল দেহ নিয়ে পালনের জন্য রইলো ৮ পরামর্শ।



ফল ও সবজি খান–
এই বছরের রমজানে ইফতার বলুন কিংবা সেহরি, পারলে অবশ্যই ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সঙ্গে সবজি বেশি করে খাবেন। যতোটা সম্ভব হয় তাজা ফল সংগ্রহ করবেন এই মাসের জন্য। ইফতারির আয়োজনে ভাজা খাবার কমিয়ে ফল বেশি করে খান। এতে শরীর অনেকটাই ফুরফুরে লাগবে। পেটের খিদের সঙ্গে কমবে মনের খিদেও।
হালকা খাবার–
হালকা খাবারেই আহার সারুন। বিরিয়ানি, খিচুড়ি বা পোলাও এমন ভারী খাবারগুলি অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন। সহজপাচ্য হতে হবে খাবারের উপাদান।



ইফতার ও সেহরিতে মিষ্টান্ন রাখুন–
মিষ্টি জাতীয় খাবার কিছু না কিছু অবশ্যই রাখবেন ইফতারের টেবিলে। সম্ভব হলে সেহেরিতেও রাখুন মিষ্টান্ন। খেজুর রমজানে শরীরের ভীষণ বন্ধু এক খাবার। কাজেই ফল এবং মিষ্টি উপাদান হিসেবেও খেজুর বেছে নিন খাদ্য তালিকায়। দুধ-চাল আর বাদামের মিশ্রণে সাধারণ পায়েসও মজাদার খাবার হতে পারে ইফতারে।
কড়া পানীয়কে না বলুন–
কড়া পানীয়ের বদলে হালকা পানীয় গ্রহণ করুন এই এক মাস! চা ছাড়া দিন চলে না যাদের তারা লাল চায়ের অভ্যাস করুন। এছাড়া কোমল পানীয় এড়িয়ে চলবেন।
ইফতারে বেহিসেবি খাওয়া নয়–



সারাদিন রোজা থাকার পর ইফতারে গোগ্রাসে খাবেন না। এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। এসময় অল্প অল্প করে তৃপ্তি সহকারে খান।
রোজায়ও চলুক ব্যায়াম–
রমজানে সুস্থতা পালনে শরীর চর্চার সঠিক সময় হচ্ছে ইফতারের ঠিক পূর্বে। তাই, ইফতারের ঘণ্টা দু-এক আগে নিজের শরীর চাঙ্গা রাখতে হালকা ব্যায়াম বা যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। ইফতারের পর ১৫-২০ মিনিটের জন্য বাইরে হেঁটে আসতে পারেন। তবে কখনোই ভারী ব্যায়াম করবেন না।
দুপুরের পর একটু ঘুমান–
রোজার সময় প্রতিদিন দুপুরের পরে একটু ঘুমিয়ে নিন। তাহলে আর রোজার ক্লান্তিতে আপনার শরীর ভেঙে পড়বে না। জোহরের নামাজের পর থেকে আছরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়টি দিবানিদ্রার সবচেয়ে ভালো সময়।



ডায়াবেটিস ও উচ্চর’ক্তচাপে করণীয়–
উচ্চর’ক্তচাপ যাদের আছে তারা রোজা রাখতে পারেন। তবে তাদেরকে নিয়মিত ওষধ খেতে হবে। তাহলেই তারা রোজা রাখতে পারবেন। ইউরিক এসিড থাকলে ডালের তৈরি খাবার কম খেতে হবে। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়ার নতুন তালিকা করবেন।
শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার ওপর গুরুত্ব দিন। এসব বিষয় খেয়াল রাখলে রমজানেও আপনার শরীর-স্বাস্থ্য পুরোপুরি ফিট থাকবে।



ইফতারে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
রোজার গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অংশ হলো সেহরি ও ইফতার। সেহরি খেয়ে রোজা রাখা এবং ইফতার দিয়ে রোজা ভাঙা দু’টিই জরুরি। সারাদিন রোজার শেষে ইফতারে নানাকিছু খেতে আপনার ইচ্ছা করতে পারে। কিন্তু মন চাইলেই সবকিছু খেতে যাবেন না যেন। বরং খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়ে। জেনে নিন-
ইফতারে পান করুন স্বাস্থ্যকর শরবত। লেবুর শরবত খেতে পারেন। শরবতের সঙ্গে যোগ করতে পারেন ইসুবগুলের ভুষি। এটি আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।



ইফতারের যাবতীয় খাবার একত্রে মাখিয়ে খেতে পছন্দ করেন অনেকে। সঙ্গে যোগ করেন পেঁয়াজ-মরিচও। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে মরিচ ও পেঁয়াজের পরিমাণ বেশি না হয়। কারণ অধিক স্বাদের জন্য বেশি পরিমাণ মরিচ-পেঁয়াজ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ইফতারে তো অবশ্যই ফল খাবেন। তবে অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফল যেমন কাঁচা আম, আপেল, তেঁতুল, লেবু, বাতাবি লেবু, কামরাঙ্গা ইফতারের শুরুতে না খেয়ে শেষে খাওয়া ভালো। এতে আপনার শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে। প্রথমে এই ফলগুলো খেলে সমস্যা হতে পারে।
সারাদিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারে অধিক ভাজা ও তেল সমৃদ্ধ খাবার পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তেলে ভাজা খাবার কম খাওয়া বা একেবারে না খাওয়াই ভালো।



ইফতারে মশলাদার খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকে অনেকেরই। ইফতারে কম মশলাযুক্ত খাবার খান। অধিক মশলাযুক্ত খাবার পেটে গ্যাস্ট্রিকের কারণে সৃষ্ট ক্ষত বাড়িয়ে তোলে এবং যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়।
ইফতারের সময় খাওয়ার মাঝে অতিরিক্ত পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে হজমে সহায়ক উপাদান সঠিকভাবে নিঃসৃত হবে। খাবারের মাঝে বেশি পানি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
চা-কফির প্রতি আগ্রহ অনেকের একটু বেশিই থাকে। তাই বলে ইফতারে খালি পেটে চা-কফি একদমই খাবেন না। চা-কফি পেটে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। চা কিংবা কফি খেতে চাইলে ইফতারের ঘণ্টাখানেক পরে খান।