রাতের আঁধারে গোপনে নারায়ণগঞ্জ ছাড়ছে মানুষ, ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

7610

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে – দেশে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে । এখন পর্যন্ত ২১৮ জন করোনা’ভা’ইরাস আ’ক্রান্’ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ঢাকার। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে ৪৬ জন রোগী ধরা পড়ার পর প্রশাসন নড়ে-চড়ে বসলেও পালাচ্ছেন অধিবাসীরা।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সেখানে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা রাতের আঁধারে নিজ নিজ গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশের কাছে খবর যাওয়ার পর নিজ গ্রাম থেকেও পালানোর ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে কাজের জন্য যায় মানুষ। এর বেশির ভাগই গার্মেন্টস কর্মী। সেখানকার মেয়র আইভী রহমান জানান, ‘নারায়ণগঞ্জে লকডাউন হয়েছে। কিন্তু পাড়া-মহল্লায় মানুষ এখনও হাঁটা-হাঁটি করে। সচেতনতার অভাব আছে।

নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্রতিটি মহল্লায় প্রচুর মানুষ। তারা যদি না শোনে, তা হলে তো সর্বত্রগামী হয়ে তাদের পক্ষে ভূমিকা রাখা কঠিন হবে।

ঘটনার ভ’য়া’ব’হ’তা আঁচ করতে পেরে মেয়র কারফিউ জারির দাবি করলেও লকডাউন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ। জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার কাজাইকাটা গ্রমের ওয়াহেদুজ্জামান বিদ্যুৎ বলেন, গতকাল বুধবার আমাদের গ্রামে একই পরিবারের ৪ জন ফিরেছেন।

রাতে তারা মাইক্রোবাসে করে বাড়িতে আসেন। ফিরেই গ্রামের চৌরাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাড়ি ঘুরছেন তারা। এর ফলে গ্রামে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যানে কে জানানোর পর তাদের নামের তালিকা চেয়েছেন।

লক্ষ্মীপুরের নজরুল ইসলাম দিপু জানান, নারায়ণঞ্জে মানুষের অযথা যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করার পর চাঁদপুর হয়ে অনেক লোক তাদের জেলায় ফিরছেন। চাঁদপুরের মেহিদী হাসান বাপ্পি জানান, চাঁদপুরের কচুয়া এলাকার উজানী তুলপাই গ্রামে একজন গত দুই দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরেছেন।

এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর কচুয়ার পুলিশ তার গ্রামে এসে খুঁজে বের করে এবং র’ক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। কিন্তু বুধবার ভোর থেকে ওই ছেলে প’লা’ত’ক। সঙ্গে তার তার দুই ভাইও প’লা’ত’ক।

কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর থানার কর্তিমারী গ্রামের সাব্বির হোসেন বলেন, দুই দিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে বেশ কয়েক জন আমাদের গ্রামে এসেছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ না জেনে তাদের সঙ্গে মিশছেন। তারাও সব জায়াগায় যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী সরকারি এক কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, অনেকে চিটাগাং মোড় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন।

এ দিকে করোনা’ভা’ইরাসের ভ’য়’ঙ্ক’র থাবার কবলে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। গত ৮ মার্চ থেকে গতকাল ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাসে দেশে মোট ২১৮ জন করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৪ জনই রাজধানী ঢাকার। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তকৃত ৫৪ জন রোগীর ৩৯ জনই রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

কর্মহীন ও দুঃস্থ লোকদের জন্য বরাদ্দ ১০ টাকার চাল পচা ও দু’র্গ’ন্ধ’যু’ক্ত

ম’হামা’রি ক’রো’নার কারণে পরিমিত খাদ্য যোগানো অনিশ্চিত কর্মহীন মানুষদের। তাদের খাদ্য নিশ্চিত করতে ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। সেই মোতাবেক কাজও চলছে দেশ জুড়ে। কিছু কিছু জায়গায় ভোগ দখলেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার অনেক জায়গায় আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে সে চাল পচা-দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকাধরা যা খাওয়ার অনুপযোগী বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। অনেকেই এসব চাল ফেরত দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এমনকি পুলিশে দেয়ার হুমকিও দিচ্ছেন ডিলাররা।

দেখা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ২৩ জন ডিলারের মাধ্যমে গত ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে ১১ হাজার ৮২৭ জন কার্ডধারীদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়। উপকারভোগীরা এই চাল ১০ টাকা কেজি দরে কিনতে এসে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সুবিধা ভোগীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কিনতে ৩০ কেজির বস্তা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু যাদের অর্থ সংকট তারা বস্তা কিনতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তাদের খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া অতি কষ্টে উপার্জন করা ৩০০ টাকা দিয়ে ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর বস্তা খুলে দীর্ঘ দিনের পুরাতন, পচা-দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকা ধরা নষ্ট চাল পাচ্ছেন।

অভিযোগ পেয়ে ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের চায়না বাজার, শরিষাবাড়ীহাট, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম বাজার, রাজারহাট বাজারের সোনালী ব্যাংক চত্বর, ছিনাই ইউনিয়নের চাঁন্দের বাজার স্পটে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় সুবিধাভোগীদের লাইনে-বেলাইনে চাল সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

অনেক স্থানেই সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। চাল সংগ্রহ করার পর উপকারভোগীরা চাল নিয়ে বাড়িতে গিয়ে নষ্ট চাল দেখে ফেরত নিয়ে আসলে ডিলাররা উল্টো পুলিশে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে অসহায় দুঃস্থ উপকারভোগীরা পচা, নষ্ট চালই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম বাজারের স্পটে মনশ্বর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম নামের এক উপকারভোগী চাল উত্তোলন করার পর পচা, দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকা ধরা খারাপ চাল পাওয়ায় বেলা ১১ টা থেকে ডিলার মফিজুল ইসলামকে চাল ফেরত নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু ফেরত না নিয়ে উল্টো পুলিশে দেয়ার হুমকি দেন ডিলার।

মন্দির গ্রামের বাবলু মিয়া সকাল সাড়ে ৯ টায় চাল উত্তোলন করে পচা চাল পাওয়ায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পাল্টানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রতারিত ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ডিলারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উল্টা-পাল্টা কথা বলেন তারা।

এ বিষয়ে ডিলার মোজাফ্ফর অভিযোগ করে বলেন, চাল তো উপজেলা খাদ্য গুদাম সরবরাহ করেছে, তারাই এ রকম বস্তা দিয়েছে। ফেরত না নিলে তখন আমার বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আব্দুল আউয়াল বলেন, পচা চাল যাওয়ার কথা নয়। তবে দু’চারটা চালের বস্তা গুদামের একে বারে নিচ থেকে চলে যেতে পারে। গেট পার হওয়ার পর আমার দায়িত্ব নেই।
উপজেলা খাদ্য কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. যোবায়ের হোসেন এ বিষয়ে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।