
বর্তমান জীবনযাত্রায় ঘুম কমে গিয়েছে অনেকেরই। অনেক রাত পর্যন্ত চলে কাজ।। আবার কারণে কিংবা অকাণেই রাত জেগে থাকছেন অনেকে। যার ফলে ঘুমের সময় ক্রমশ কমে আসছে। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘুম। ঘুম হচ্ছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কাজের মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বন্ধ থাকে।



ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় প্রাণীর মধ্যে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। তবে বর্তমান জীবনযাত্রায় ঘুম কমে গিয়েছে অনেকেরই। অনেক রাত পর্যন্ত চলে কাজ। ফলে ঘুমের সময় ক্রমশ কমে আসছে। এর ফলেই বাড়ছে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি।
হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি করে: আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুম না হলে বা কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে।



উচ্চ র’ক্ত’চাপের সমস্যা বৃদ্ধি করে: ঘুম পর্যাপ্ত না হলে বা কম হলে বাড়তে পারে উচ্চ র’ক্ত’চাপের সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’ গুলো ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ র’ক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো সমস্যা।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে: অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিস বংশগত কারণে হয়ে থাকে। যা সঠিক হলেও, অনিয়মিত ঘুমও এর জন্য দায়ী। দীর্ঘদিন রাতে অনিয়মিত ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।



মানসিকতা নষ্ট হয়: পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে আমাদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়। যার ফলে মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না পেলে অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, হ্যালুসিনেশনের, স্মৃতিভ্রংশের মতো একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনে দিনে নিজের বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও লোপ পেতে পারে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে: ঘুমের কারণে আমাদের শরীরের ক্ষয়-ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয় হয়। যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ (Living organisms) কাজ করতে থাকে। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।



হজমের সমস্যা বৃদ্ধি করে: প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হজমের সমস্যাও বাড়ে। না ঘুমালে শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়। তাই হজমের নানা সমস্যা শুরু হয়।
অতএব বুঝতেই পারছেন, আমাদের দৈহিক প্রায় সব কার্যকলাপই ঘুমের উপরে নির্ভরশীল। তাই নিজের প্রতি অবহেলা নয়। প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে ঘুম না আসলে ঘুমের জন্য কোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।



মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে ওষুধি গুণ
মিষ্টি কুমড়া খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। খেতেও দারুণ সুস্বাদু। তবে মিষ্টি কুমড়া খেলেও এর বীজ নিশ্চয় ফেলে দেন? এখানেই হচ্ছে মারাত্মক ভুল। জানলে অবাক হবেন, মিষ্টি কুমড়ার মতো এর বীজেরও রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। মিষ্টি কুমড়া অনেক রোগের ওষুধ। আমাদের দেহের মারাত্মক ছয় রোগ থেকে রক্ষা করে কুমড়ার বীজ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই মিষ্টি কুমড়ার বীজ ফেলে দেয়ার মতো ভুলটি আর নয়। চলুন জেনে নেয়া যাক মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে-
বাতের ব্যথা–
একটু বয়স বাড়লেই বাতের ব্যথায় ভুগতে দেখা যায় অনেককেই। জানেন কি, এই ব্যথা থেকে মুক্তি দেয় মিষ্টি কুমড়ার বীজ। ভেঙে যাওয়া চর্বিসমূহ হাড়ের সন্ধিস্থলে জমা হয়ে ব্যথার সৃষ্টি হয়। আর মিষ্টি কুমড়া চর্বিসমূহ হাড়ের সন্ধিস্থলে জমা হতে দেয় না।এভাবে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বাতের ব্যথা কমিয়ে থাকে।



হাড়ক্ষয় রোধ-
শরীরে জিংকের অভাব হচ্ছে হাড়ক্ষয় রোগের প্রধান কারণ। জিংকসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাদ্যের উত্স হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। মিষ্টি কুমড়ার বীজ হাড়ক্ষয় রোধ করে।
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়-
মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর জিংক। যা প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া সবল শিশু জন্মসহ বিভিন্ন রোগ নিবারণ করে।
লৌহঘটিত রোগ প্রতিরোধ-
লৌহঘটিত রোগ প্রতিরোধ করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর আয়রন আছে। প্রতিদিন ৩৫ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে দৈনিক চাহিদার প্রায় ৩০% পূরণ হবে।



প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার-
মিষ্টি কুমড়ার বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক ও ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। মিষ্টি কুমড়ার বীজ থেকে উত্পন্ন তেল প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণ করে।
কোলেস্টেরল কমায়-
খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ফাইটোস্টেরল দেহের রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ ফাইটোস্টেরলের এক বিশেষ উত্স হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। মিষ্টি কুমড়ার বীজে ফাইটোস্টেলের পরিমাণ বাদামে উপস্থিত ফাইটোস্টেলের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। যার পরিমাণ ২৬৫ মিলিগ্রাম বা ১০০ গ্রাম। তাই মিষ্টি কুমড়ার বীজ অবশ্যই খাওয়া উচিত।