
সত্য ও সুন্দরের পক্ষে বীরত্ব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জীবনে একাধিক যু’দ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন এবং সত্য ও সুন্দরের পক্ষে বারবার তাঁর বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর বীরত্বের অন্যতম নিদর্শন তাঁর ব্যবহৃত তরবারিগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। তাঁর ব্যবহৃত ৯টি তরবারির মধ্যে একটি আল মাছুর।



এটি রাসুল (সা.)-এর প্রথম তরবারি, যা তিনি ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছিলেন। তরবারির ওপর খোদাই করে লেখা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে মুত্তালিব। এর দৈর্ঘ্য ছিল ৯৯ সেন্টিমিটার। ব্লেডের দৈর্ঘ্য ছিল ৮১ সেন্টিমিটার। আর হাতল ছিল ১৪ সেন্টিমিটারের। নান্দনিক এই তরবারির প্রস্থ ছিল ৪ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে গিয়ে ৩.৫ সেন্টিমিটার হয়ে গেছে।
রাসুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবহৃত ৯টি তরবারির পরিচয় তুলে ধরা হলো।
আল মাছুর : এটি রাসুল (সা.)-এর প্রথম তরবারি, যা তিনি ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছিলেন। তরবারির ওপর খোদাই করে লেখা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে মুত্তালিব। এর দৈর্ঘ্য ছিল ৯৯ সেন্টিমিটার।



ব্লেডের দৈর্ঘ্য ছিল ৮১ সেন্টিমিটার। আর হাতল ছিল ১৪ সেন্টিমিটারের। নান্দনিক এই তরবারির প্রস্থ ছিল ৪ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে গিয়ে ৩.৫ সেন্টিমিটার হয়ে গেছে।
আল কাদিব : এটি ছিল লোহার তৈরি অত্যন্ত মজবুত তরবারি। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০০ সেন্টিমিটার। প্রস্থ ছিল ২.৮ সেন্টিমিটার। এই তরবারির ব্লেড ছিল তুলনামূলক চিকন, যার উপরিভাগ ছিল মাত্র ২.২ সেন্টিমিটার। মজবুত এই তরবারিকে সঠিকভাবে চালানোর জন্য ছিল ১৪ সেন্টিমিটার হাতল। শুধু ব্লেডের দৈর্ঘ্য ছিল ৮৬ সেন্টিমিটার।



আল আদব : এই তরবারি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) ওহুদের যু”দ্ধ চলাকালে রাসুল (সা.)-কে উপহার দিয়েছিলেন। এর আগে এই তরবারি দিয়ে যু”দ্ধ করেছিলেন বিশিষ্ট সাহাবি আবু দুজানা (রা.)। বর্তমানে এটি কায়রোর জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
জুলফিকার : এটি রাসুল (সা.)-এর ব্যবহৃত তরবারিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ওহুদের যু”দ্ধে রাসুল (সা.) এই তলোয়ার ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-কে উপহার দেন। ইসলামী ইতিহাসের সূত্র থেকে জানা যায়, ওহুদের যু”দ্ধে মক্কার সবচেয়ে শক্তিশালী যো”দ্ধা”র ঢাল ও শি’র’স্ত্রা’ণ এক আঘাতে দ্বিখণ্ডিত করেন আলী (রা.)। এই আঘাতে তার তরবারিও ভেঙে যায়। এই ঘটনার পর রাসুল (সা.) তাঁর ‘জুলফিকার’ নামের নিজ তরবারি আলী (রা.)-কে দেন। এই তরবারির দৈর্ঘ্য ছিল ১০৪ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে ব্লেডের অংশ ছিল ৮৯ সেন্টিমিটার।



এর হাতল ছিল অন্যান্য তরবারির তুলনায় হালকা ও বড়, ১৫ সেন্টিমিটার। মজবুত এই তরবারির প্রস্থও ছিল কিছুটা মোটা, ৬ সেন্টিমিটার, যার উপরিভাগ ছিল ৪.৫ সেন্টিমিটার। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর তরবারির বাঁটের অগ্রভাগ ছিল রুপার তৈরি। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৮১)। হাদিসবিশারদদের মতে, তরবারিটি ‘জুলফিকার’। মক্কা বিজয়ের দিন এটি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিল।
আল কুলায়ি : বনু কাইনুকা থেকে গনিমতস্বরূপ রাসুল (সা.) যে তিনটি তরবারি পেয়েছিলেন, এটি তার একটি। এটি সাধারণত ভ্রমণকালে নিরাপত্তার জন্য তা ব্যবহার করা হতো। যু”দ্ধে”র ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হতো না। হাতলসহ এই তরবারির দৈর্ঘ্য ১১৪ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে ব্লেড ছিল ৯১ সেন্টিমিটার। তরবারিটির প্রস্থ ছিল ৫.৫ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে গিয়ে ৪.৫ সেন্টিমিটার হয়ে যায়।



আল হাত্তাপ : এটি রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে ভারী তরবারি, যা যু’দ্ধে’র জন্য বেশ উপযোগী ও কার্যকর। এটিও বনু কায়নুকা গোত্র থেকে পাওয়া গনিমতের মধ্যে ছিল। হাতলসহ এই তরবারির দৈর্ঘ্য ১১৩ সেন্টিমিটার, যার ব্লেড ছিল ৯৮ সেন্টিমিটার। ধারালো এই তরবারির প্রস্থ ছিল ৮ সেন্টিমিটার, যা উপরিভাগে ৬ সেন্টিমিটারে শেষ হয়েছে।
আর রাসুব : এটি এমন একটি তরবারি, যা রুপা দিয়ে মোড়ানো ছিল। এটি রাসুল (সা.)-এর তরবারিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লম্বা, যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৪০ সেন্টিমিটার। অনেকের ধারণা, এটি ছিল জাফর সাদিক (রা.)-এর তরবারি।



আল বাত্তার : রাসুল (সা.)-এর এই তরবারির ওপর খোদাই করে লেখা ছিল ‘আল কিসাস’ (মৃ”ত্যু”দ”ণ্ড) এবং ‘সাইফুল আদল’ (ন্যায়ের তরবারি)। এ ছাড়া সেই তরবারিতে ছিল নান্দনিক নকশা।
আল মিখজাম : রুপায় মোড়ানো ছিল আল মিখজাম, যা রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেছেন।
মানব জাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাহমাতুল্লিল আলামিন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন তার জন্য তিনি আল্লাহর পর সর্বাধিক প্রশংসার অধিকারী। নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে শত নির্যাতন, নি’পী’ড়’ন ও জুলুম-অত্যাচার সহ্য করার পরও কখনো কারও জন্য বদদোয়া করেননি। তিনি শুধুই বলতেন আল্লাহ আমাকে জগদ্বাসীর জন্য নবীয়ে রহমত বানিয়ে প্রেরণ করেছেন। নবীয়ে রহমত (সা.) তায়েফে কাফের ও মুশরিক কর্তৃক জুলুমের সম্মুখীন হয়েছেন।



এমনকি মক্কার কুরাইশদের অ’ত্যা’চা’রে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর আদেশে স্বীয় মাতৃভূমি পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন। চলে গেলেন পবিত্র মদিনায়। সেখানেও মক্কার কাফের ও মুশরিকরা রাহমাতুল্লিল আলামিনকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। নবী করিম (সা.)সহ সব মুসলমানকে সমূলে ধ্বং’স করার জন্য ষ’ড়’য’ন্ত্র করেছিল। তাদের ষ’ড়’য’ন্ত্রে’র কারণে বদর, উহুদ ও খন্দকের মতো বড় বড় যু”দ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন সব যু”দ্ধে নবী করিম (সা.) ও মুসলমানদের বিজয় দান করেছেন।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দশম হিজরি/৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যে হজ পালন করেন, ইসলামের ইতিহাসে তা ‘হুজ্জাতুল বিদা’ বা ‘বিদায় হজ’ নামে খ্যাত। প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার মতান্তরে এক লাখ ২৬ হাজার মুসলিম নরনারী তাঁর সফরসঙ্গী হয়ে হজ করতে মক্কা মোকাররমা গমন করেন। ৮ জিলহজ সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে নবী করিম (সা.) মিনায় চলে গেলেন।



তারপর ৯ জিলহজ শুক্রবারের দিন ভোরে নামাজ পড়ে মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হলেন। লাখো কণ্ঠের গগনবিদারী ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে দুই পাশের পর্বতমালা কেঁপে উঠল। ওই দিনটি ছিল ইসলামের গৌরবময় ও সুউচ্চ মর্যাদা বিকাশের দিন
এর ফলে প্রাক-ইসলামি অন্ধকার যুগের যাবতীয় কুসংস্কার ও অহেতুক কাজকর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেন, যার সারকথা হলো, ‘হে আমার উম্মতগণ! আজ যে কথা তোমাদের বলব, মনোযোগ দিয়ে শোনো। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের সঙ্গে একত্রে হজ করার সুযোগ আমার আর ঘটবে না। ওহে মুসলমান! অন্ধকার যুগের সব ধ্যান-ধারণাকে ভুলে যাও, নতুন আলোয় পথ চলতে শেখো। জেনে রাখো! আজ থেকে অতীতের সব মিথ্যা সংস্কার, অনাচার, পাপাচার ও কুপ্রথা বাতিল হয়ে গেল।’



তারপর তিনি সর্বজনীন মানবাধিকারের কনথা ঘোষণা করে বললে, ‘মনে রেখো! প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই এবং সব মুসলমান ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ। কেউ কারও চেয়ে ছোট নও, কারও চেয়ে বড় নও। আল্লাহর চোখে সবাই সমান। নারীজাতির কথা ভুলে যেয়ো না। নারীর ওপর পুরুষের যেরূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও সেরূপ অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার কোরো না।
মনে রেখো, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের গ্রহণ করেছ। সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি কোরো না। এ বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের ধন-প্রাণ পবিত্র বলে জানবে। যেমন পবিত্র আজকের এদিন—ঠিক তেমনই পবিত্র তোমাদের পরস্পরের জীবন ও ধনসম্পদ।
হে মুসলমানগণ! হুঁশিয়ার! নেতার আদেশ কখনো লঙ্ঘন কোরো না। যদি কোনো কর্তিত নাশা কাফ্রি ক্রীতদাসকেও তোমাদের আমির করে দেওয়া হয় এবং সে যদি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালনা করে, তবে অবনত মস্তকে তার আদেশ মেনে চলবে। দাস-দাসীদের প্রতি সদা সদ্ব্যবহার কোরো। তাদের ওপর কোনো অ’ত্যা’চা’র কোরো না।’