
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ। চরিত্রের দিক দিয়ে যেমন রাসূল সাঃ এর সমাক্ষ কেউ ছিল না তেমনি দৈহিক গঠনের দিক দিয়েও নয়। আপন পর সবাই অকপটে তা স্বীকার করত।
আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোচ্চ বংশোদ্ভত হওয়ার দিকে ইঙ্গিঁত করে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাঁর রিসালত বা পয়গামের দায়িত্ব কাকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে অনেক জ্ঞাত।” (সূরা আন আমঃ ১২৪)



যে কারণে রাসূল (সা.) এর ক’ব’র’কে রওজা বলা হয়। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুসলমানকেই এ বিষয়ে বিস্তারীত জেনে রাখা দরকার। কারণ প্রত্যেক মুসলমানই রাসূল (সা.) এর ক’ব’র-কে রওজা বলে থাকে। কিন্তু কেন বলে তা অনেকেই জানে না।
আসুন আজকে এ বিষয়ে জেনে নিই-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দা’ফ’ন’স্থ’ল বা ক’ব’রকে রওজা বলা হয়। কারণ হলো, রওজা শব্দের অর্থ বাগান। এখানে রওজা বা বাগান দ্বারা উদ্দেশ্য, ‘জান্নাতের একটি বাগান।’



যেহেতু প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক’ব’র’টি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান। তাই এ অর্থে তাঁর কবরকে ‘রওজায়ে আতহার’ (পবিত্র বাগান), রওজা শরিফ ইত্যাদি বলা হয়। (সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; কবরকে রওযা বলা : জামে তিরমিযী ২/৭৩; (কবরে নিষিদ্ধ কার্যাবলি ? সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; জামে তিরমিযী ১/৭৩)।
রাসূল (সা.) কে ভালবাসার নমুনা:
মানুষ একে অপরকে ভালবাসে হৃদয়ে ও বিশ্বাসে; যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তার আচার আচরণ ও কর্মে। নবী (সা.)কে ভালবাসলে তার আলামত নিশ্চয়ই আমাদের কাজে কর্মে থাকতে হবে। যারা নবী (সা.)কে ভালবাসেন তাদের মধ্যে নিম্নের আলামতগুলো বিদ্যমান থাকা আবশ্যক।



এক. রাসূল (সা.) কে সম্মান করা: এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘আমিতো আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে সাহায্য কর ও সম্মান কর এবং সকালে সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর’’ (সূরা আল ফাতহ: ৮-৯)।
আমাদেরকে সব সময় নবী (সা.) কে সম্মান করতে হবে। নবী (সা.) যতটুকু মর্যাদার হক্বদার আমাদেরকে ততটুকুই মর্যাদা দিতে হবে এতে কোন কার্পণ্য করা যাবে না। রাসূল (সা.) কে সম্মান করতে গিয়ে আমাদেরকে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে- যেমন:



ক. নবী (সা.) এর সামনে উঁচুস্বরে কথা না বলা: নবী (সা.) যখন জীবিত ছিলেন তখন তাঁর সামনে উচু আওয়াজেও কথা বলা নিষেধ ছিল। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন: ‘‘হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বরকে রাসূলের কণ্ঠস্বরের উপর উঁচু করো না এবং তোমরা তাঁর সাথে এমন উঁচু স্বরে কথা বলো না; যেমন তোমরা একে অপরের সাথে উচু স্বরে কথা বলে থাক। এতে তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে যাবে, অথচ তোমরা টেরও পাবে না’’ (সূরা আল হুজুরাত: ০২)।
তিনি আমাদের মাঝে এখন আর বিদ্যমান না থাকলেও তাঁর কথামালা রয়ে গেছে। তাই কুরআনের এ আয়াতের দিকে লক্ষ্য রেখে রাসূল (সা.) নিসৃত বাণী মনোযোগ ও সম্মানের সাথে শুনতে হবে এবং তা যথাযথভাবে আমল করতে হবে। রাসূলের কোন কথাকেই বিকৃত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। যে সমস্ত দায়ী ইলাল্লাহ ও আলেমে দ্বীন রাসূলের বাণী প্রচার করেন; তাঁদেরকেও সম্মান করতে হবে।



খ. রাসূল (সা.) এর উপর ছালাত ও ছালাম পড়া: নবী (সা.) এর উম্মতের কর্তব্য হচ্ছে- রাসূল (সা.) এর উপর ছালাত ও ছালাম পেশ করা। এটি তাঁদের উপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাগণ নবীর উপর ছালাম পেশ করে। অতএব, হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর উপর ছালাত ও ছালাম পেশ কর’’ (সূরা আল আহযাব: ৫৭)। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন: ‘‘যে ব্যক্তির সামনে আমার নাম উচ্চারিত হল; অথচ সে আমার উপর ছালাম পেশ করল না সে কৃপণ’’ (আহমদ)। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন: ‘‘তার নাক ধুলায় মলিন হোক যে আমার নাম শুনেও আমার উপর ছালাম পেশ করল না’’ (আহমদ)।
দুই: রাসূল (সা.) ও তাঁর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখা: রাসূল (সা.) কে ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- তাঁকে এবং তাঁর সুন্নাতকে সবসময় সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘এ সম্পদে হক রয়েছে মুহাজিরদের, যারা নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ থেকে উৎখাত হয়েছে। তারা কেবল অন্বেষণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি এবং তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে।



তারাই তো সত্যবাদী’’ (সূরা আল হাশর: ০৮)। সাহাবীগণ রাসূল (সা.) কে ও তাঁর সুন্নাতকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। সব কিছুর উর্ধে রাসূলকে মর্যাদা দিতেন। তাঁর আদেশ-নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেন। রাসূলের আদর্শকে সমুন্নত রাখাই ছিল তাঁদের একমাত্র সাধনা। সাহাবায়ে কিরামের জিন্দেগী পর্যালোচনা করলে তাঁদের রাসূল প্রেমের অসংখ্য নজির দেখতে পাওয়া যায়। রাসূলের জন্য তাঁরা তাঁদের জীবন কুরবান করে ইতিহাস রচনা করেছেন।
আমাদেরকেও তাই রাসূলের আদর্শ ও তাঁর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করতে হবে। রাসূল (সা.) এর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখার অর্থ হচ্ছে- রাসূলের সুন্নাত সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা, একে বিশুদ্ধ রাখা, এর অপপ্রয়োগ না করা, অপব্যাখ্যা না করা ও চরমপন্থী ও বিদয়াতপন্থীদের হাত থেকে রক্ষা করা। আর যারা রাসূলের হাদীস কেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্দেহ ও অপবাদ প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক জবাব দেয়া। তাদের মিথ্যা প্রচারণাকে মানুষের সামনে যুক্তি দিয়ে অসার প্রমাণ করা।



তিন: রাসূল (সা.) যা বলেছেন তা সত্য বলে মেনে নেয়া: ঈমানের অন্যতম দাবী হচ্ছে- রাসূল (সা.) কে সকল প্রকার মিথ্যা ও অপবাদের উর্ধে রাখা। তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন, এই বিশ্বাস হৃদয়ে ধারন করা। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যা খবর দিয়েছেন তাকে সত্য জানা।
এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘‘নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কুরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়’’ (সূরা আন নাজম:১-৪)। নবী (সা.) কে অপবাদ দেয়া ও তাঁর কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা কুফুরী।
এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদেরকে নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন: ‘‘আর কুরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তা বানিয়ে নেবে।



অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহ নেই- তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে। মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’’ (সূরা ইউনুস:৩৭-৩৮)।
জুমার খুতবা চলাকালে ইসলামের দৃষ্টিতে যা যা করণীয় নয়
জুমার নামাযে উপস্থিত ব্যক্তিদের উপর নীরবতা পালন করে ইমামের খুতবা শোনা বাধ্যতামূলক। খুতবা জুমার নামাজের শর্ত বা ফরজ। খুতবা ব্যতীত জুমার নামাজ হয় না। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। অন্যের সাথে কথা বলা নিষেধ। এমনকি অন্য কারো কথার উত্তর দেয়াও নিষেধ।



হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) বলেছেন- জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো সেটাও অনর্থক।” (বুখারি, হাদিস: ৮৯২; মুসলিম, হাদিস: ২০০৫)
হাদিস দ্বারা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব ও কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়।
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না।’ (মেশকাত, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৪৩২)



তাই মুসল্লিদের উচিত খুতবার সময় কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে খুতবা শোনা এবং যেসব কাজ নামাজে নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকা।
ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘ফাতাওয়ায়ে শামি’তে একটি মূলনীতি উল্লেখ রয়েছে, ‘যেসব কর্ম নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। যেমন- কথাবার্তা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি।’ (ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৫)
অনেক মুসল্লি খুতবা চলাকালে বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়, যা সম্পূর্ণ শরিয়ত পরিপন্থী এবং হারাম। দু’:খ’জনক হলেও সত্যি, জুমার খুতবা চলাকালে নিজেদের মধ্যে কথা বলার নি’ষেধা’জ্ঞা অনেকেই ভালো করে জানেন না বা জানলেও অনেক ক্ষেত্রে পালন করেন না।
এছাড়া অনেক মসজিদে খুতবা চলাকালে চাঁদার বাক্স চালানো হয়, এটাও শরিয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েজ ও অ’শোভ’নীয়। তাই খুতবার সময় এসব নাজায়েজ কর্ম পরিহার করে মনোযোগী হয়ে খুতবা শোনা অত্যন্ত জরুরি।