
করোনা’ভা’ইরাসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে মৃ’ত্’যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স।
ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃ’ত্যু এবং জনগণের শরীরে কম পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকার মধ্যে একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে নতুন এক গবেষণায়।



ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে অবস্থিত অ্যাঙলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ডা. লি স্মিথ এবং কুইন এলিজাবেথ হসপিটালের ডা. পিটার ক্রিস্টিয়ান ইলি এ ব্যাপারে গবেষণা করেন। এজিং ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল জার্নালে তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকার কারণে দ্রুত ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্তের শঙ্কা থাকে। শ্বেত রক্ত কণিকা প্রাণবন্ত করে তোলার কাজ করে ভিটামিন ডি। কিন্তু শরীরে এর মাত্রা কম থাকলে ভাইরাস দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। করোনাভাইরাস মূলত রোগীদের শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কম থাকার সুযোগ নিচ্ছে।



ইতালি এবং স্পেনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার বেশি। এই গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ওই দুই দেশের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কম। কারণ, হিসেবে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, সে সব দেশে বয়স্ক ব্যক্তিরা সূর্যের আলোতে সেভাবে থাকতে চান না। সে কারণে প্রাকৃতিক ভিটামিন ডি থেকে তারা বঞ্চিত হন।
সূর্যের আলোতে থাকতে অনীহার কারণে শরীরে গড় ভিটামিন ডি সেসব দেশের মানুষের কম। ডা. লি স্মিথ বলেন, ইউরোপের ২০টি দেশে আমরা পরিসংখ্যান চালিয়ে দেখেছি, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, তাদের শরীরে ভিটামিন ডি কম।



তিনি আরো বলেন, ভিটামিন ডি পারে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে। যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি কম, করোনা আক্রান্ত হলে তাদের পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। যারা গুরুতর আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদেরও ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যাচ্ছে।
ভিটামিন ডি এর অভার দূর করবেন যেভাবে
কতগুলি সহজ পদ্ধিতি অবলম্বন করার মাধ্যমে এ সমস্যা সহজেই দূর করতে পারেন।



গায়ে রোদ লাগান:
আজকাল আমাদের জীবনযাত্রা এত মাত্রায় এয়ার কন্ডিশান কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে যে শরীরে রোদ লাগে না বললেই চলে। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার পিছনে মূল কারণ হলো সূর্যের আলোর অভাব। আসলে সূর্যালোক হল এই ভিটামিন ডি-এর সবথেকে বড় উৎস। তাই শরীরের ভেতরে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে সপ্তাহে দুবার, সকাল বেলা কমপক্ষে ৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগাতে হবে।
কর্ডলিভার অয়েল:
কর্ড মাছের লিভার থেকে সংগ্রহ করা এই তেল সারা গায়ে লাগিয়ে যদি মাসাজ করতে পারেন, তাহলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অনেকাংশ কমে যায়। কারণ এই তেলটির ভেতরে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ডি মজুত থাকে। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং জযেন্ট পেন কমাতেও এই তেল বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।



মাশরুম:
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হাড়ের পাশপাশি হার্ট এবং ব্রেনকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে সপ্তাহে ২-৩ দিন মাশরুম খেতে হবে। প্রসঙ্গত, ভিটামিন বি-এর চাহিদা পূরণেও মাশরুমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
সামদ্রিক মাছ:
সামদ্রিক মাছে যে পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, সেই পরিমাণে ভিটামিন ডি-ও থাকে। তাই সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।



সূর্যমুখী ফুলের বীজ:
এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতি প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে ভিটামিন ডি এবং উপকারি প্রোটিন। তাই তো নিয়মিত যদি সূর্যমুখী ফুলের বীজ একটু ভেজে নিয়ে খেতে পারেন, তাহলে ভিটামিন ডি-এর যোগান নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
দুধ খাওয়া জরুরি:
মাশরুমের মত দুধেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই শরীরের ভিটামিন ডি-এর যোগান বৃদ্ধির করার জন্য দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া খুবই জরুরি।
ডিম:
শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে চাইলে রোজের ডায়েটে একটা করে ডিম থাকা খুবই জরুরি। নিউট্রিশনিস্টদের মতে ডিমের ভেতরে প্রোটিন এবং উপকারি কোলেস্টেরল পাশাপাশি ভিটামিন ডি-ও রয়েছে। তাই শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে এবং হাড়ের নানাবিধ রোগ দূরে করতে রোজ একটা বা দুটো ডিম খাওয়া উচিত।