
ক’রো’না ভাই’রাস থেকে বাঁচতে বিভিন্ন রকম মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় মানুষকে। এ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কোনটি সঠিক আবার কোনটি সঠিক নয়। এবার মাস্ক এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের বিখ্যাত চিকিৎসক ডা. দেবী শেঠী।



তিনি বলেন, সার্জিক্যাল মাস্কের মতোই কাপড়ে মাস্ক নিরাপদ। তাই দয়া করে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করুন। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় এ পরামর্শ দেন ডা. দেবী শেঠি।
এই চিকিৎসক বলেন, যখন আমি অপারেশন করি, তখন সার্জিক্যাল মাস্ক পরে নিই, যাতে কাশি দিলে আমার রোগী সংক্রমিত না হন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আপনারা কেন এই সার্জিক্যাল মাস্ক পরছেন ?



তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তার-নার্স প্যারামেডিকস, যারা ক’রো’না রোগীদের সেবা দিচ্ছেন, তাদের মাস্কগুলো আপনি পরছেন। অথচ আমরা মাস্ক পাচ্ছি না। আপনি কি জানেন, এতে ডাক্তার-নার্সরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ?
এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, এই মাস্ক (সার্জিক্যাল) মাত্র ছয় ঘণ্টা পরে থাকা যায়, এরপর আপনি কি করেন ? বাড়ি যান টেবিলে বা কোথাও রেখে দেন। আপনার শিশু এটি স্পর্শ করতে পারে, এ থেকে সে সংক্রমিত হতে পারে।



ডা. দেবী শেঠী আরও বলেন, আপনার নিঃশ্বাস থেকে যা নির্গত হয়, এই মাস্কের (সার্জিক্যাল) উপাদান তা শুষে নিতে পারে না। আপনি যখন এটি ডাস্টবিনে ফেলেন, তখন ময়লাওয়ালা এটা পুনরায় ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে ভাই’রাস পুনরায় উৎপাদন করবে।
তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই আপনার মাস্ক পরা উচিত। তবে দয়া করে কাপড়ের মাস্ক পরুন। কাপড় কোনো কিছু শুষে নিতে পারে। এটি ধুয়ে দিতে পারেন, শুকাতে পারেন, আবারও পরতে পারেন। আপনার ব্যবহারের জন্য কাপড়ের মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্কের মতোই নিরাপদ।



ক’রো’না-সংক্রমণ এড়াতে ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খান
করো’না ভাই’রাস প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ ওষুধ যদিও এটি নয়, তবে সংক্রমণ ঠেকাতে ভিটামিনের কোনও ভূমিকা নেই, এমন কিন্তু নয়। অবশ্যই আছে। সুষম খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন-মিনারেল শরীরে এলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই সংক্রমণ ঢুকলেও কমে যায় রোগের আশঙ্কা।
ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমিত সেনগুপ্তর মতে, রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে বলে কিছু ভিটামিন খেলে কাজের কাজ খুব একটা হয় না। জীবনযাপনের নিয়ম না মেনে, অনিয়মিত ভাবে মুঠো মুঠো কয়েকটা ক্যাপসুল, ট্যাবলেট খেলে রোগ ঠেকানো যায় না।
তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে কোনও সংক্রমণই দুর্বল করতে পারে না। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে জীবনযাপনের কয়েকটি নিয়ম।



খেতে হবে সেই সব খাবার যা সংক্রমণ ঠেকায়। এবার তা জেনে নিন…
• বাইরের তেল-মশলাদার খাবার, ভাজাভুজি বা মিষ্টিখাবারের বদলে অল্প তেলে ঘরে রান্না করা টাটকা খাবার খাওয়া শুরু করুন। প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ-মাংস-ডিম-দুধ যেমন খাবেন, পর্যাপ্ত শাকসব্জি-ফল, বাদাম, বীজ, ভাত, আটার রুটিও খেতে হবে। রোগ ঠেকানোর যাবতীয় কলকাঠি লুকিয়ে আছে এদের মধ্যেই।
• সংক্রমণ ঠেকাতে দারুন কার্যকর ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার। তাই যেসব খাবারে ভিটামিন এ বেশি আছে, সে সব খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, চিজ, সব রকম বাদাম, বীজ, হোল গ্রেইন বা খোসাওয়ালা শস্যদানা যেমন ব্রাউন রাইস, আটার রুটি, খোসাওয়ালা ডাল ইত্যাদি।



• হলুদ ও কমলা রঙের সব্জিতে আছে বিটা ক্যারোটিন। শরীরে গিয়ে যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। কাজেই কুমড়া, গাজর ইত্যাদিও খাওয়া উচিত।
• শরীরে জীবাণু ঢুকলে তাকে ধ্বং’স করতে উঠেপড়ে লাগে ভিটামিন ‘বি’। বিশেষ করে বি-৬. বি-৯ ও বি-১২। বি-৬ আছে চাল, গম, জোয়ার, ডাল, বিন্স, সবুজ শাক-সবজি, ফল, বাদাম, মাছ, চিকেন ও রেড মিটে। বি-৯ বা ফোলিক অ্যাসিড আছে সবুজ শাকসব্জি, ডাল, বিনস, বাদাম, বীজে। আর বি-১২ আছে ডিম, দুধ, মাংসে। কাজেই এদেরও খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে পরিমাণ মতো।



• ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় কোষের যে ক্ষ’তি হয়, তা সামলায়। এছাড়া রোগ ঠেকানোর আরও অনেক কাজ এসব ভিটামিন। তাই ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ কমলা, লেবু, বেরি, কিউয়ি, ব্রকোলি, টমেটো, ক্যাপসিকাম খেতে পারেন। ভিটামিন ‘ই’ পেতে হলে খেতে হবে বাদাম, সবুজ শাক ও উদ্ভিজ তেল।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা আছে ভিটামিন ‘ডি’-এরও। গায়ে ভাল করে রোদ লাগালেই এর চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়। বাকিটুকু পেতে খান ডিম, মাছ, দুধ।



• খাবারে পর্যাপ্ত আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম থাকাও খুব জরুরি। আয়রন পেতে খেতে পারেন চিকেন, মাছ, ডাল, বিন্স, খোসাওয়ালা শস্যদানা। জিঙ্ক পাবেন সামুদ্রিক মাছ, মাংস, চিকেন, শুকনো বিন ও বাদামে। অন্য দিকে বাদাম, মাংস, মাশরুম থেকে পাওয়া যাবে সেলেনিয়াম। যদি কোন কারণে এসব খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে না পারেন, ডাক্তারের পরামর্শ মতো সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে।
এর পাশাপাশি ফুসফুসকে বেশি কর্মক্ষম রাখতে হালকা ব্যায়াম করুন ও ধূ’মপান ছেড়ে দিন। ভাল করে ঘুমাতে হবে, কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘুমেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে।