স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি নামাজও শিখছে শিশুরা… আলহামদুলিল্লাহ

11727

শিশুদের ক্লাসে পড়ানোর পাশাপাশি সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম শেখানো হচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই নিয়মিত নামাজ আদায় করেন শিক্ষকেরা প্রতিদিন জোহরের ওয়াক্তে । শিশুদের এভাবে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ায় অভিভাবকসহ স্থানীয়রা অনেক খুশি ।

গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি শিশু জামাতে দাঁড়িয়ে জোহরের নামাজ আদায় করছে। বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা জানান, কোনো শিশুকে জোর করা হয় না, যারা স্ব-ইচ্ছায় নামাজ শিখতে চায়, তাদের নিয়েই জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। এছাড়া ক্লাসের আলোচনায় শিশুদের নৈতিক শিক্ষাও দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফিজুর রহমান বলেন, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি রয়েছে, সেখানে নামাজ শিক্ষা নামে একটি অধ্যায় আছে। এই অধ্যায়টি পড়ানোর সময় মনে হয়েছিল, বাচ্চাদের পাঠদানের পাশাপাশি নামাজ কীভাবে পড়তে হয় সেটা বাস্তবে শেখাতে পারলে আরও ভালো হয়।

একথা চিন্তা করে তিন বছর আগে থেকেই এভাবে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকেরা বাচ্চাদের সঙ্গেই জোহরের নামাজ আদায় করেন। এভাবে কিছুদিন শেখানোর পর তারা বিষয়গুলো শিখে যায়। নামাজ শেখানোর এ প্রক্রিয়া বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত সপ্তাহ থেকে আবারও শুরু করা হয়েছে। এখন স্কুল মাঠে ত্রিপল বিছিয়ে শিশুদের নামাজ শেখানো হচ্ছে।

নামাজ আদায়কারী পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, স্যারেরা স্কুলে নামাজ পড়া শিখিয়ে দেন। এখন বাড়িতে গিয়ে একা একাই নামাজ পড়তে পারি।

এ বিষয়ে মিলন মাহবুব নামের এক অভিভাবক বলেন, নামাজ শেখা খুবই ভালো কাজ। আমরা অনেকেই ছোটবেলায় নামাজ শিখি না। পরে বড় হয়েও ভুল ভাবে নামাজ আদায় করি। এ জন্য শিক্ষকেরা বাচ্চাদের এখনই নামাজ শিক্ষা দিচ্ছেন, এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ।

প্রধান শিক্ষক মাহফিজুর রহমান জানান, ১৯৪৪ সালে ৯৯ শতক জমির ওপর নলভাঙ্গা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে, ১৯৭৩ সালে সেটি সরকারি করা হয়।

বিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে আছেন, বাকি চারজন নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। এদের মধ্যে দু’জন নারী-দু’জন পুরুষ। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে ১৭৩ জন ছেলে-মেয়ে। 

তিনি জানান, বিদ্যালয়ে কক্ষের সংখ্যা খুবই কম। মাত্র তিনটি শ্রেণীকক্ষ ও একটি ছোট অফিস-কক্ষ নিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। নতুন ভবনের জন্য অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু এখনো মেলেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন ভবনের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর করা প্রয়োজন বলেও জানান প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়ে জানার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানুর কাছে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

মসজিদে নামাজে শিশুদের অংশ নেয়ার বিষয়ে অনেকেই বিতর্কের সৃষ্টি করেন। অনেক মসজিদে দেখা যায় শিশুদের একপাশে দাঁড় করানো হয়। আলেমদের এবিষয়ে মতামত হচ্ছে শিশুদের মসজিদে যেতে উৎসাহিত করতে হবে।

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, একবার হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের একটা সিজদা খুব দীর্ঘায়িত করলেন। তাতে সাহাবারা (রা.) ভাবলেন হয়তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সমস্যা হয়েছে, অথবা তার উপর অহি নাজিল হচ্ছে। তাই তিনি সিজদা থেকে উঠতে পারছেন না।

নামাজের পর সাহাবারা এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ রকম কিছুই হয়নি আমার। আসলে, আমি যখন সিজদায় ছিলাম তখন আমার নাতী হাসান আমার কাঁধে চেপে বসেছিলো। ওর মনের আশা পূরণ হওয়ার আগে ওকে ঘাঁড় থেকে নামাতে মন চাইছিলো না আমার।

এতে লক্ষলীয় বিষয় হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী (রা.) কে শাসিয়ে দেননি হজরত হাসানকে মসজিদে না আনার জন্য। এমনকি, হাসান ঘাঁড়ে চেপে বসায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজেও মনোযোগে বিঘ্ন ঘটেনি। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে শিশুদের আল্লাহর ঘরের সঙ্গে পরিচয় করানো ও নামাজের জন্য অভ্যস্ত বানানো

একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কেননা শিশুকালে যে জিনিসে অভ্যাস হয়, পরে তা করা সহজ হয়, নচেৎ তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়স থেকেই নামাজের নির্দেশ দাও। আর যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হবে, তখন তাদের নামাজে অবহেলায় শাস্তি প্রদান করো।’ -আবু দাউদ: ৪৯৫