২৫ লাখ টাকার জমি গরিবদের খাওয়াতে বিক্রি করলেন দুই ভাই

1582

২৫ লাখ টাকায় জমি বিক্রি- দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যে যেসব দরিদ্র মানুষ না খেয়ে রয়েছেন, তাদের অবস্থা দেখে ২৫ লাখ রুপিতে নিজেদের জমি বিক্রি করে সেসব মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন দুই ভাই। তাঁরা পেশায় ছোটখাটো ব্যবসায়ী। নাম তাজাম্মুল পাশা ও মুজাম্মিল পাশা। বাড়ি দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলায়।

ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভি এ নিয়ে একটি অনলাইন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হচ্ছে, মহা’মারি করো’নাভাইরা’সের কারণে কোলার জেলার যেসব দিনমজুর ও তাদের পরিবারে না খেয়ে দিনযাপন করছেন তাদের এমন অবস্থা দেখে তারা নিজেদের জমি বিক্রি করে তাদের সাহায্য করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

দুই ভাই বলছেন, বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ লকডাউনের কারণে না খেয়ে রয়েছেন। তাদের অবস্থা শোচনীয়। কিন্তু এত মানুষকে খাবার দিতে হলে অনেক অর্থ প্রয়োজন। তাই তারা জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। জমি বিক্রির সেই অর্থ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে দেওয়া ছাড়াও বাড়িতে খাবার রান্না করে মানুষকে খাওয়াচ্ছেন তারা।

তাজাম্মুল পাশা ও মুজাম্মিল পাশা জমি বিক্রির পর নিজেদের বাড়িতে তাবু টানিয়ে একটা রান্নাঘর তৈরি করেন। সেখানে সবাই মিলে রান্না করেন। সেই খাবার দেওয়া হয় দিনমজুর ও গৃহহীন মানুষ তাদের পরিবারকে। তাদের এমন মহৎ উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে, এছাড়া দুবেলা দুুমুঠো খাবার পাচ্ছেন অসংখ্য অসহায় মানুষ।

এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী বড় ভাই তাজাম্মুল পাশা আবেগ আপ্লুত চোখে কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক আগেই আমাদের বাবা-মা মা’রা গেছে। তারপর থেকে আমরা কোলারে নানি বাড়িতে বড় হয়েছি। ওই সময় ধর্মীয় দিক বিবেচনা না করে হিন্দু, মুসলিম, শিখ সব ধর্মের মানুষ আমাদের সাহায্য করেছি।’

তারা দুই ভাই এখন বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষাবাদ করে। যখন তাদের বাবা-মা মারা যায় তখন তাজাম্মুলের বয়স পাঁচ আর মুজাম্মিলের মাত্র তিন। তারপর তারা চিকবালাপুর থেকে কোলারে নানির বাড়িতে চলে আসেন। এরপর সেখানেই বড় হয়েছেন তারা।

তাজাম্মুল বলেন, ‘আমরা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। এখানকার সব ধর্মের মানুষের সাহায্যের মাধ্যমেই আমরা বেঁচে ছিলাম। তাই আমরা এ দুঃসময়ে অসহায় এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের এক বন্ধুর কাছে জমি বিক্রি করি। তারপর সেই অর্থ দিয়ে আমরা মানুষকে দুমুঠো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।

তবে লকডাউন চলার কারণে আইন অনুযায়ী তারা জমি বিক্রি করতে পারেননি। তাই বন্ড সইয়ের মাধ্যমে বন্ধুর কাছ থেকে এই অর্থ নিয়েছেন। লকডাউন শেষ হওয়ার পর ভূমি নিবন্ধন অফিস খোলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ওই জমি ক্রেতাকে দলিল করে দেবেন।

এখন পর্যন্ত ওই দুই ভাই ৩ হাজারের বেশি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল ও চিনিসহ আরও অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দিয়েছেন। এছাড়া মহা’মারি করো’নার বিস্তার ঠেকাতে গরিব মানুষদের সাবান ও মাস্কও সরবরাহ করেছেন তারা। সাহায্য পাওয়া পরিবারগুলো ওই দুই ভাইয়ের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ভারতে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩ মে। তবে এটা আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে দেশটিতে প্রায় ২৫ হাজার আ’ক্রা’ন্তের মধ্যে ৭৭৫ জন মা’রা গেছে। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে কোটি কোটি দিনমজুর ও গরিব মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

মক্কা ছাড়া সৌদির অন্যান্য প্রদেশে কা’রফি’উ শিথিল

পবিত্র মক্কা নগরী বাদে সৌদি আরবের অন্যান্য প্রদেশে কার’ফি’উ শিথিল করা হয়েছে। রোববার (২৬ এপ্রিল) সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক ঘোষণায় কা’রফি’উ সাময়িক ভাবে শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে সৌদি নাগরিক এবং প্রবাসীদের জীবনকে আরেকটু সহজতর করতেই বাদশাহর সময়োপযোগী এ ঘোষণা।

বিশ্বব্যাপী ম’হামারি আকার ধারণা করা করো’নাভাই’রাসের সং’ক্র’মণ এড়াতে কার’ফি’উ জারি রয়েছে সৌদিতে। তবে রোববার সৌদি বাদশাহ ঘোষণায় বলেন, ২৯ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সৌদি আরবে সব ধরনের দোকানপাট, শপিংমল খোলা রাখা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে নাগরিক এবং প্রবাসীরা বাইরে বের হতে পারবেন।

কেবলমাত্র মক্কা নগরী ছাড়া সৌদি আরবের সর্বত্র বাদশাহর এই ঘোষণার আওতাধীন থাকবে। মক্কা নগরীতে আগের মতোই ২৪ ঘণ্টার কা’রফি’উ বলবৎ থাকবে। মক্কাতে করো’না আ’ক্রা’ন্তের সংখ্যা প্রতিদিন অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে মক্কা নগরীকে সাময়িক কা’রফি’উ শিথিলতার আওতায় আনা হয়নি।

তবে, সঙ্গত কারণেই এই সুযোগের আওতার বাইরে রয়েছে সেলুন, বিউটি পার্লার, জিম, এবং কমিউনিটি সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এর বাইরে সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে উন্মুক্ত রাখা যাবে।

রোজার মাসে রোজাদারদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আরও সহজলভ্য করতে এবং মানুষের জীবন যাপনকে আরও সহজতর করতেই বাদশাহর কার’ফি’উ শিথিলের এই নির্দেশ।