৫ মিনিটে গার্মেন্টসের ৮০ লাখ টাকা লুটের ঘটনা উদঘাটন !

2832

গত ৭ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈর সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টসের মাইক্রোবাস থেকে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুট করে নেয় অ’স্ত্র’ধা’রী ডাকাত দল।

মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের ফিল্মিস্টাইলের অপারেশন। এর মধ্যেই পোশাক শ্রমিকদের বেতনের ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুট করে নেয় ডা’কা’ত দল।

দীর্ঘ দিনের সাজানো নিখুঁত পরিকল্পনায় তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কর্মী বেশে ডা’কা’ত দলেরই একজন!

এ ঘটনায় রোববার (১৪ জুন) ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডা’কা’তি’র মূল পরিকল্পনাকারীসহ পাঁচজনকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আটকরা হলেন- রিয়াজ (৩৬), সাগর মাহমুদ (৪০), জলিল (৪০), ইসমাইল হোসেন মামুন (৪৫) ও মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু (৪১)।

এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ১ হাজার ১০০ ইউএস ডলার, একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার, তিনটি মোটরসাইকেল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি বিদেশি পি’স্ত’ল, ২১ রাউন্ড গো’লা’বা’রু’দ, দু’টি ম্যাগজিন, তিনটি পাসপোর্ট এবং ৩৮টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস আগে চক্রটির মূলহোতা জলিলের পরিকল্পনায় ঈসমাইল হোসেন এবং মনোরঞ্জন মন্ডল দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ শেষে টার্গেট নির্ধারণ করে। কারণ, ইনক্রেডিবল গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন ক্যাশে দেওয়া হয় এবং ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহের সময় কোনো অ’স্ত্র’ধা’রী নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না।

আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোরঞ্জন ওই গার্মেন্টসে সাব-কন্ট্রাক্টের কর্মী হিসেবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আসা যাওয়া শুরু করেন।

এর আড়ালে তিনি গার্মেন্টসের অন্যান্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পার্শ্ববর্তী দোকান ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করেন। তার তথ্যের ভিত্তিতেই ডা’কা’তি’র পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, তবে তাদের এপ্রিল এবং মে মাসের ডা’কা’তি’র পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ এপ্রিলের বেতন দেওয়া হয়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এবং মে মাসের বেতনের টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে।

অবশেষে জুনের বেতন সংগ্রহের সময় পুলিশ স্কট থাকবে না নিশ্চিত হয়ে ৭ জুন ডা’কা’তি’র দিন নির্ধারণ করে তারা। ঘটনার প্রায় ১২ থেকে ১৫ দিন আগে ঈসমাইল, জলিল এবং মনোরঞ্জন মাঠ পর্যায়ে রেকী করে ডা’কা’তি’র জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান নির্বাচন করেন।

ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন প্রথমে ৩টি মোটরসাইকেল করে ছয়জন একটি সুবিধাজনক স্থানে মিলিত হয়। পেছনের আরোহীদের সবাই অ’স্ত্র বহন করেছিল। অন্যদিকে ছি’ন’তা’ই’য়ে’র টাকা বহনের জন্য একটি প্রাইভেটকার জামগড়া নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। মনোরঞ্জন গার্মেন্টস এলাকা থেকে ডা’কা’ত দলটিকে প্রতি মুহুর্তের তথ্য সরবরাহ করছিলেন।

সাড়ে ১১ টার দিকে মোবাইলে মূলহোতা জলিলকে টাকা উত্তোলনের জন্য গার্মেন্টসের লোকজন মাইক্রোবাসে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে জানান মনোরঞ্জন। তথ্যের ভিত্তিতে সফিপুরে অপেক্ষমাণ তিনটি মোটরসাইকেল নিরাপদ দূরে থেকে মাইক্রোবাসটি অনুসরণ করতে থাকে।

টাকা উত্তোলনের পর ফেরার পথে খাড়াজোড়া এলাকায় দু’টি মোটরসাইকেল মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে গতি কমিয়ে দেয়। তৃতীয় মোটরসাইকেলটি মাইক্রোবাস থামিয়ে দিয়ে কৌশলে ব্যারিকেড দিয়ে ফেলে।

এরপর ডা’কা’ত দলের সদস্যরা লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসেরর গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং অতর্কিতভাবে মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাসে গু’লি ছুঁড়ে। এতে একটি গুলি ফ্যাক্টরির সহকারী মার্চেন্ডার রাজীব মজুমদার গুরুতর জখম হন।

পরবর্তীতে তারা মাইক্রোবাসে থাকা ফ্যাক্টরির লোকদের অ’স্ত্রে’র মুখে জিম্মি করে টাকা ছি’নি’য়ে নিয়ে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলে এলোপাথাড়ি ‘গু’লি ছোড়ার’ ফলে দলের মূলহোতা জলিলের হাতেও গু’লি’বি’দ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা মোটরসাইকেল করে জামগড়া কাশিমপুর রোডে অপেক্ষমাণ প্রাইভেটকারের কাছে পৌঁছান। গু’লি’বি’দ্ধ জলিল এবং লু’ট করা টাকা নিয়ে সাগর ও রিয়াজ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বলেন, তারা প্রথমে সবাই সাগরের খিলগাঁওয়ের বাসায় যান। সেখান থেকে জলিলকে মালিবাগের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পথিমধ্যে টাকাগুলো ভাগ করে নেন। অপারেশনে অংশগ্রহণ ভেদে সবাইকে ৮ লাখ ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা এবং অ’স্ত্র বহন ও গু’লি এবং প্রাইভেটকার দেওয়ার জন্য আলাদা আলাদাভাবে টাকা দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, মূলত ৮ থেকে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেটে এ ডা’কা’তি’র ঘটনাটি ঘটিয়েছে। দলের মূলহোতা জলিলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকায় গ্রে’ফ’তা’র এড়াতে তিনি ২০১৬ সালে প্রবাসে পাড়ি জমান। ৭ থেকে ৮ মাস আগে দেশে ফিরে ফের ডা’কা’তি’র পরিকল্পনা করেন জলিল।

চক্রটি ডা’কা’তি, ছি’ন’তা’ই ছাড়াও মা’দ’ক, চা’দাঁ’বা’জি ও প’তি’তা’বৃত্তি’র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রে’ফ’তা’রে’র চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।