৬ বছরে জমা টাকার দ্বিগুণ মুনাফা দেবে যেসব ব্যাংক !

11126

দ্বিগুণ মুনাফা দেবে যেসব ব্যাংক- ভবিষ্যতের জন্য কে না চায় টাকা জমাতে। সেই জমানো টাকা একসময় হয়ে উঠবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই জমানো টাকায় যদি বেশি লাভ মেলে, পাঁচ থেকে ছয় বছরে যদি টাকা দ্বিগুণ হয়, তাহলে তো কথায় নেই। হ্যাঁ পাঠক, আপনি যদি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে চান, তাহলে এখনই ভালো সময়। কারণ, ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখলে এখন যে পরিমাণ লাভ মিলছে, ভবিষ্যতে তা মিলবে না।

তবে গ্রাহক হিসেবে আপনাকে একটু খোঁজখবর নিতে হবে যে ব্যাংকে টাকা জমা রাখবেন, তার আর্থিক অবস্থার। এরপরই টাকা জমা করতে হবে। তা না হলে শুধু বেশি লাভ পাওয়ার আশায় টাকা জমা রেখে বিপদও হতে পারে।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংক খাতে ২০১২-১৩ সালের দিকে যেমন তারল্যসংকট চলছিল, পাঁচ বছর পর আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ জন্য সব ব্যাংকই এখন আমানতের ওপর সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংক এখন আমানতে ৯ শতাংশের ওপরে লাভ দিচ্ছে। অনেকের আমানতের সুদহার ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রাহকেরা কী দেখে ব্যাংক যাচাই করবেন, এ নিয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে গ্রাহকের দেখা উচিত ব্যাংকের রেটিং কেমন, খেলাপি ঋণ কত। আর ব্যাংকটি কারা পরিচালনা করছেন, ব্যবস্থাপনায় কারা আছেন, তা-ও দেখা উচিত। বিশেষ করে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি কেমন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিবেচনা করেই গ্রাহকের ব্যাংক বাছাই করা উচিত, সুদহার দেখে নয়।

ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, সময় শেষে তা প্রদান করে না। গ্রাহকদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকেরা যদি স্থায়ী আমানত রাখে, তাহলে ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই।

অর্থাৎ যদি কোনো ব্যাংক ছয় বছরে দ্বিগুণ টাকা দিতে চায়, তাহলে সেই ব্যাংককে সেই টাকা দিতেই হবে। তবে প্রতি মাসে টাকা জমা করলে তাতে সুদহারের পরিবর্তন হতে পারে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ ব্যাংক চলতি বছরে সুদহার বাড়িয়েছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোই বেশি সুদে টাকা জমা নিচ্ছে। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে হওয়া পদ্মা ব্যাংক সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত নিচ্ছে। অর্থাৎ কেউ ১০ লাখ টাকা জমা করলে ৫ বছর ৬ মাস পর ব্যাংক ওই গ্রাহককে ২০ লাখ টাকা ফেরত দেবে। যদিও এর আগে ব্যাংকটিতে টাকা জমা রেখে বিপদে পড়েছিল গ্রাহকেরা। তবে এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

নতুন ব্যাংকের মধ্যে মধুমতি ব্যাংক ৫ বছর ১০ মাসে দ্বিগুণ ও ৯ বছরে তিন গুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত নিচ্ছে, যাতে সুদহার পড়ছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭৫ ও ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৬ বছর ৬ মাসে টাকা দ্বিগুণ করার আশ্বাসে আমানত নিচ্ছে, যাতে সুদহার পড়ছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংক ৬ বছর ৫ মাসে টাকা দ্বিগুণ করার আশ্বাসে আমানত নিচ্ছে। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক সাত বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে আমানত সংগ্রহ করছে।

আর পুরোনো ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ৬ বছরে দ্বিগুণ ও ১১ বছরে তিন গুণ টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। ন্যাশনাল ব্যাংকে এক কালীন জমাকৃত টাকা ০৬ (ছয়) বছরে ০২ (দুই) গুন হবে । টাকা দ্বিগুণ করতে আইএফআইসি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সময় নিচ্ছে ৭ বছর ৬ মাস।

আর টাকা দ্বিগুণ করতে ঢাকা ব্যাংক ৮ বছর, ইউসিবিএল ৮ বছর ৫ মাস, ব্র্যাক ব্যাংক ৮ বছর ১১ মাস, সিটি ব্যাংক ৯ বছর সময় নিচ্ছে। আবার পুরোনো কয়েকটি ব্যাংক টাকা দ্বিগুণ করার আমানত পণ্য বন্ধও করে দিয়েছে।

জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রাশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা জমা রাখলে একটা সময় পর তা বেড়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ হবে, এমন সেবাই আমরা চাই। তবে কোথায় রাখলে টাকা নিরাপদে থাকবে এবং সময়মতো ফেরত পাব, সেটা জানা বেশ কঠিন।’

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে যেভাবে টাকা জমা রাখবেনঃ

দ্বিগুণ বৃদ্ধি প্রকল্প : ১. গ্রাহক নিজ নামে অথবা যৌথ নামে অথবা প্রতিষ্ঠানের নামে আমাদের যে কোনো শাখায়/এজেন্ট পয়েন্টে মাসের যে কোনো কর্মদিবসে কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা জমা করে এই প্রকল্প খুলতে পারবেন।

২. প্রকল্পের মেয়াদ: ৬ বছর ৬ মাস

৩. জমাকৃত অর্থ নগদায়নের নিয়মাবলী: ক. মেয়াদান্তে নগদায়নের নিয়মাবলী : মেয়াদান্তে গ্রাহক জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ টাকা পাবেন।

খ. মেয়াদপূর্ব নগদায়নের নিয়মাবলী: মেয়াদপূর্তির পূর্বে কোনো আমানতকারী টাকা উত্তোলন করতে চাইলে নিম্নোক্ত নিয়মে জমাকৃত অর্থসহ মুনাফা দেয়া হবে : i. ৬ মাসের কম সময়ের পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জমাকৃত অর্থ ফেরত দেয়া হবে । ii. ৬ মাস ও তার বেশি কিন’ ১ বছরের কম সময়ের পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে পূর্ণ মাসগুলোর জন্য নগদায়নকালীন সময়ে প্রচলিত সঞ্চয়ী হিসাবের সর্বনিম্ন মুনাফা হারে জমাকৃত অর্থের উপর মুনাফা প্রদান করা হবে।

গ. মেয়াদোত্তর নগদায়নের নিয়মাবলী : প্রকল্প মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে নগদায়ন করা না হলে নিম্নোক্ত নিয়মে জমাকৃত অর্থসহ মুনাফা দেয়া হবে : i. মেয়াদপূর্তির সময় হতে ১ মাসের কম সময়ের পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মেয়াদপূর্তিতে প্রদেয় অর্থ প্রদান করা হবে।

ii. ১ মাস ও তার বেশি কিন’ ৬ মাস ও তার কম সময়ের পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে পূর্ণ মাসগুলোর জন্য নগদায়নকালীন সময়ে প্রচলিত সঞ্চয়ী হিসাবের সর্বনিম্ন মুনাফা হারে মেয়াদপূর্তিতে প্রদেয় অর্থের উপর মুনাফা প্রদান করা হবে।

iii. ৬ মাস পর যেকোনো সময় নগদায়নের ক্ষেত্রে পূর্ণ মাসগুলোর জন্য নগদায়নকালীন সময়ে প্রচলিত ছয় (৬) মাস মেয়াদী এফডিআর হিসাবের সর্বনিম্ন মুনাফা হারে মেয়াদপূর্তিতে প্রদেয় অর্থের উপর মুনাফা প্রদান করা হবে।

ঘ. গ্রাহকের মৃ”ত্যু”জ”নি”ত কারণে নগদায়নের নিয়মাবলী : প্রকল্প সচল অবস্থায় গ্রাহক মৃ”ত্যু”বরণ করলে মৃ”ত্যু”র দিন পর্যন্ত সময়ের জন্য স্কিমের মুনাফার হার অনুযায়ী গণনাকৃত খতিয়ান স্থিতি (Ledger Balance) দেয়া হবে। অবশিষ্ট সময়ের জন্য মৃ”ত্যু দিনের খতিয়ান স্থিতির উপর পূর্ণ মাসগুলোর জন্য নগদায়নকালীন সময়ে প্রচলিত সঞ্চয়ী হিসাবের সর্বনিম্ন মুনাফা হারে মুনাফা প্রদান করা হবে।

৪. আমানতকারীর মৃ”ত্যু হলে সংশিস্নষ্ট হিসাব বন্ধ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নমিনি/উত্তরাধিকারীকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী হিসাবের প্রাপ্য টাকা প্রদান করা হবে।

৫. যে সকল গ্রাহক এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে হিসাব খুলেছেন, হিসাব নগদায়নের জন্য সে সকল গ্রাহককে অবশ্যই হিসাব খোলার আবেদনপত্রে উল্লিখিত শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।

৬. আমানতকারী জমাকৃত টাকা অথবা নগদায়ন মূল্যের বিপরীতে ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা অনুসারে ঋণ পেতে পারেন। মেয়াদপূর্তিতে প্রদেয় (আমানত ও মুনাফা) অর্থের বিপরীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত/আরোপিতব্য সকল প্রকার কর/লেভি/ডিউটি বা সারচার্জ গ্রাহক বহন করবেন।